পলাশ চন্দ্র সাহা বনাম শিমুল রানি সাহা (২০২০)

Palash Chandra v Shimul Rani Case FP BN

পলাশ চন্দ্র সাহা বনাম শিমুল রানি সাহা ও অন্যান্য

রেফারেন্স : 14 SCOB [2020] AD

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী : পলাশ চন্দ্র সাহা
বিবাদী : শিমুল রানি সাহা ও অন্যান্য

ঘটনা :

বাদী, পলাশ চন্দ্র সাহা, জানান যে, তিনি ১৩৭৫ সালের ৩রা ভাদ্র জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত পিতা-মাতা ছিলেন নিশি কান্ত দাস এবং চারুবালা দাস। বাদীর বয়স যখন ছয় বছর, তখন চারুবালা দাস মারা যান। সেই সময়ে, মৃত ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা এবং গৌরী রানি সাহা (বিবাদী নং ৪) নিঃসন্তান ছিলেন এবং তারা পলাশ চন্দ্র সাহাকে (বাদী) দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৩৭৫ সালের ১৫ই ফাল্গুন দত্তক গ্রহণের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে পলাশ চন্দ্র সাহা ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার দত্তক পুত্র হিসেবে তাদের সাথে বসবাস শুরু করেন। নিয়মানুযায়ী দত্তক নেওয়ার পর থেকে বাদী তার প্রকৃত পিতার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

দত্তক নেওয়ার পর, বাদীকে তার পালক পিতা-মাতা লালনপালন করতে থাকেন। এরই মধ্যে, তাদের একমাত্র কন্যা শিমুল রানি সাহা (বিবাদী নং ১) জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা বাদীকে স্কুলে ভর্তি করেন এবং স্কুলের সকল নথিতে, এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেট এবং ভোটার আইডি কার্ডেও নিজেকে বাদীর পিতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৯৯৩ সালে, ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা কর্তৃক দায়েরকৃত একটি মামলায়, তিনি স্পষ্টভাবে বাদীকে তার দত্তক পুত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার মৃত্যুর পর, বাদী তার পুত্র হিসেবে প্রয়োজনীয় সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। তার দত্তক নেয়া মা (বিবাদী নং ৪) তার সাথে বাস করতে থাকেন, এবং বাদী তার বোন ও তার পরিবারকে তার সাথে থাকার অনুমতি দেন।

অন্যদিকে, শিমুল রানি সাহা দাবি করেন যে, বাদী ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার দত্তক পুত্র বা পালক পুত্র নন। তিনি দাবি করেন যে বাদী কেবল তার পিতার মিষ্টির দোকানের একজন হিসাবরক্ষক ছিলেন। শিমুল রানি আরও বলেন যে, হিন্দু আইনের অধীনে, তার দুই পুত্র ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে পান। এছাড়াও, তিনি অভিযোগ করেন যে, পলাশ চন্দ্র সাহার দ্বারা দায়ের করা মামলা মিথ্যা দাবি ও অভিযোগের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মামলাটি ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার মৃত্যুর অনেক পরে দায়ের করা হয়।

ইস্যু :
১. পলাশ চন্দ্র সাহার দত্তক গ্রহণ কি হিন্দু আইনের অধীনে বৈধ বলে গণ্য হবে?
২. পলাশ চন্দ্র সাহা কি সমস্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করবেন?

যুক্তিতর্ক :

আপিল আদালতে বাদীর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব এ. জে. মোহাম্মদ আলী যুক্তি পেশ করেন। তিনি বলেন, নিম্ন আদালত এবং আপিল আদালত উভয় স্থানেই বাদীকে দত্তক পুত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি “ফ্যাক্টাম ভ্যালেট” নীতি কোর্টের সামনে তুলে ধরে বলেন, যদিও দত্তক প্রক্রিয়ার সকল নিয়ম মানা হয় নি, তবুও উক্ত নীতির আওতায় দত্তক প্রক্রিয়াকে বৈধ বলা উচিত। কারণ দত্তক প্রহণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। উপরন্তু কোর্টে বাদীর গোত্রগত অমিলের বিষয়টি উপস্থাপিত হলে, বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, বাদীর জন্মগত পরিবার শূদ্র গোত্রের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সাহা শূদ্র গোত্রের একটি উপগোত্র। অতএব, হিন্দু আইন অনুযায়ী উক্ত দত্তক বৈধ, কারণ, দত্তক পুত্র ও দত্তক নেওয়া পরিবার একই গোত্র বা উপগোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

অপরদিকে, বিবাদীর পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে, তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ধারা ১১৯ এর অধীনে উল্লিখিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে মামলাটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মামলাটি ঘটনা ঘটার দীর্ঘ সময় পরে দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়াও, আদালতের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, বাদী পলাশ চন্দ্র সাহা কি স্বর্গী ক্ষিতীশ চন্দ্রের পালিত পুত্র নাকি দত্তক পুত্র? তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী, পলাশ চন্দ্র সাহা স্বর্গীয় ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার দত্তক পুত্র নন বরং পালিত পুত্র। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী উপস্থাপন করেন যে, পলাশ চন্দ্রের জন্ম নিশি কান্ত দাসের পরিবারে, যিনি শূদ্র গোত্রের অন্তর্গত। অতএব, বাদীর আসল নাম ছিল কৃষ্ণ চন্দ্র সাহা এবং ‘সাহা’ বৈষ্ণব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং হিন্দু আইন অনুযায়ী উক্ত দত্তক প্রক্রিয়া বৈধ নয় এবং বাদী স্বর্গীয় ক্ষিতীশ চন্দ্রের দত্তক পুত্র নয় বরং কেবল পালিত পুত্র। তিনি “ফ্যাক্টাম ভ্যালেট” নীতির প্রয়োগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এই নীতি এমন কোনো দত্তক গ্রহণকে বৈধ করতে পারে না, যা হিন্দু আইনের বিধিবদ্ধ গ্রন্থসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে। দত্তকের ক্ষেত্রে গোত্র সম্পর্কিত কঠোর নিয়ম অনুসরণের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

সিদ্ধান্ত :

আপিল আদালত জানান, বাদী পলাশ চন্দ্র সাহা এবং ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার মধ্যে গোত্রগত অমিল থাকার কারণে দত্তক গ্রহণ বেআইনি এবং অগ্রহণযোগ্য। আদালত আরো জানান, পলাশ চন্দ্র সাহা কখনোই দত্তক পুত্র ছিলেন না; তিনি ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার পালিত পুত্র ছিলেন। একজন পালিত পুত্র দত্তক পুত্রের মতো উত্তরাধিকার দাবি করতে পারে না।

এছাড়াও, আপিলকারী তামাদি আইন,১৯০৮ – এর ধারা ১১৯ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল দাখিল করতে ব্যর্থ হন। তাই আদালত আপিল আবেদন খারিজ করে দেন।

সংশ্লিষ্ট নীতি :

ফ্যাক্টাম ভ্যালেট মতবাদ : এর অর্থ “যা করা উচিত নয়, এমন কোন কাজ যখন সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন তা বৈধ বলে গণ্য হয়।”

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. তামাদি আইন, ১৯০৮
    • ধারা : ১১৯

অনুবাদক :
১. রোজিনা আকতার নিশু
২. ইমরান হোসেন ইমন
৩. রুদ্র জয়া

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share