হাফিজউদ্দিন বনাম রাষ্ট্র
সাইটেশন : [1990] 42 DLR 397
জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ
আপিলকারী : হাফিজউদ্দিন (নিম্ন আদালতে বিবাদীপক্ষ)
বিবাদী : রাষ্ট্র (নিম্ন আদালতে বাদীপক্ষ)
ঘটনা :
১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, আবদুল হাকিম সিকদারকে একটি ধানক্ষেতে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার তিন ছেলে – কফিলউদ্দিন, হাফিজউদ্দিন (আপিলকারী) ও সফরউদ্দিন তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তিনি উপস্থিত ব্যাক্তিদের নিকট মৃত্যুকালীন জবানবন্দি (Dying Declaration) প্রদান করেন এবং হামলাকারী হিসেবে তার ছেলেদের নাম উল্লেখ করেন। ভুক্তভোগীর আত্মীয় আবদুল লতিফ সিকদার (সাক্ষী নং ১) ভুক্তভোগীর ছেলেদের খুনের দায়ে অভিযুক্ত করে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ৩২ ধারা অনুযায়ী (কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক একই অভিপ্রায়ে খুন) অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযুক্ত হামলাকারী হাফিজউদ্দিন ও কফিলউদ্দিন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি (Confession) প্রদান করলেও পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করেন। ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলেও তাদের কেউই মূল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন না। প্রধান সাক্ষীগণ (সাক্ষী নং ১, ৮) ছিলেন ভুক্তভোগীর আত্মীয়, ফলে সাক্ষ্য প্রদানে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
বিবাদীপক্ষ ভুক্তভোগীর শারীরিক অবস্থা, সাক্ষীগণের নির্ভরযোগ্যতা, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির স্বতঃস্ফূর্ততা, বিচারিক প্রক্রিয়ার ত্রুটি এবং ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক যথাযথ আইনি সতর্কতার অভাবের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মৃত্যুকালীন জবানবন্দির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
ইস্যু :
১. ভুক্তভোগী কি মৃত্যুকালীন জবানবন্দি প্রদান করার জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন?
২. ভুক্তভোগী কি নিজের আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করার মতো অবস্থায় ছিলেন?
৩. সাক্ষীগণ কি নির্ভুলভাবে ভুক্তভোগীর বক্তব্য পেশ করতে সক্ষম হয়েছেন?
৪. স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং আইনগতভাবে নথিবদ্ধ করা হয়েছিল?
সিদ্ধান্ত :
নিম্ন আদালত হাফিজউদ্দিন ও কফিলউদ্দিনকে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা মোতাবেক খুন বলে গণ্য নয় এরূপ দণ্ডার্হ নরহত্যার (culpable homicide not amounting to murder) দায়ে দণ্ডিত করেন এবং উভয়কেই ১০ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি প্রদান করেন।
তবে উচ্চ আদালত যথাযথ প্রমাণের অভাব এবং কার্যবিধি লঙ্ঘনের কারণে উক্ত দণ্ডাদেশ (নিম্ন আদালতের) বাতিল করেন। ভুক্তভোগী তার উপর হামলাকারীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় ছিলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রমাণের অভাবে তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে অনির্ভরযোগ্য বলে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও, ভুক্তভোগীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি আদালতে পেশ করার সময় সাক্ষীগণের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়। তদুপরি, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নথিবদ্ধ করার সময় ম্যাজিস্ট্রেট যথাযথ সতর্কতা প্রদান, পুলিশের অনুপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং চিন্তাভাবনার জন্য যথেষ্ট সময় প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় উক্ত জবানবন্দিকে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়।
পরিশেষে, হাইকোর্ট বিভাগ আপিলকারীর পক্ষে রায় প্রদানপূর্বক অভিযোগ থেকে খালাস প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- দণ্ডবিধি, ১৮৬০
- ধারা : ৩০৪
- সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
- ধারা : ৩২(১)
- ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
- ধারা : ১৬৪
অনুবাদক :
১. এস এম মনজুর মোর্শেদ
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ