বাই গুলাব বনাম জিওয়ানলাল (১৯২২)

Bia Gulab v Jiwanlal Case FP BN

বাই গুলাব বনাম জিওয়ানলাল হরিলাল

রেফারেন্স : (1922) ILR 46 BOM 871

জুরিসডিকশন : ভারত

বাদী : বাই গুলাব
বিবাদী : জিওয়ানলাল হরিলাল

ঘটনা :

এই মামলাটি একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, বাই গুলাব, এবং জিওয়ানলাল হরিলাল নামে একজন বাণিয়া গোত্রের ছেলের মধ্যে বিবাহকে কেন্দ্র করে। মামলাটি দায়ের করেছিলেন বাই নন্দুবাই, যিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক বাই গুলাবের পক্ষের বন্ধু হিসেবে মামলাটি পরিচালনা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেন যে, বাই গুলাব “শূদ্র” (নিম্নবর্ণ) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং শূদ্র ও বাণিয়া (বৈশ্য) গোত্রের মধ্যে বিবাহ অবৈধ। এছাড়াও, বিবাহটি প্রতারণার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। জিওয়ানলাল নিজের প্রকৃত গোত্র লুকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়, এবং এই প্রতারণার জন্য ১০,০০০ রুপি ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

বিবাদী তার জবাবে বাই গুলাবের পিতৃপরিচয় এবং গোত্র সম্পর্কে যুক্তি প্রদান করেন। তিনি দাবি করেন যে, বাই গুলাব হলেন জগজীবনদাসের প্রকৃত কন্যা, যিনি বিশা মোধ বাণিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত, যা বৈশ্য গোত্রের অংশ। তিনি আরো বলেন, যেহেতু তার বাবা একজন বাণিয়া, তাই তার মায়ের গোত্র যাই হোক না কেন, তাকে বাণিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই গণ্য করা উচিত। প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করে জিওয়ানলাল জানান, বিবাহ অনুষ্ঠানে গোত্র সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে ভুল উপস্থাপনা বা প্রতারণা হয়নি।

ইস্যু :
১. সন্তানের গোত্র কি পিতার গোত্র অনুসারে নির্ধারিত হবে নাকি মায়ের গোত্র অনুসারে নাকি উভয়ের সমন্বয়ে?
২. বাই গুলাব এবং জিওয়ানলাল হরিলালের মধ্যে বিবাহ কি হিন্দু আইনের অধীনে বৈধ ছিল?
৩. হিন্দু আইনে ‘অনুলোম বিবাহ’ (উচ্চ গোত্রের পুরুষ এবং নিম্ন গোত্রের নারীর মধ্যে বিবাহ) কি আইনত নিষিদ্ধ?

সিদ্ধান্ত :

মামলায় মেয়েটির গোত্র সম্পর্কিত মতবিরোধ ছিল। তার পিতা ছিলেন বাণিয়া, কিন্তু তার মা ছিলেন শূদ্র এবং তিনি বাণিয়া গোত্রের মেয়ে হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন। বিচারিক আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে, যদিও তিনি প্রকৃতপক্ষে (জৈবিকভাবে) শূদ্র ছিলেন, তাকে বাস্তবিক ক্ষেত্রে বাণিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আদালত রায়ে উল্লেখ করেন যে, তার মায়ের গোত্র (মারাঠা, যা ঐতিহ্যগতভাবে শূদ্র হিসেবে বিবেচিত) মেয়েটির গোত্রের মর্যাদা হ্রাস করেনি। আদালত আরও বলেন, হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থায়, বিশেষত অনুলোম বিবাহের ক্ষেত্রে, সাধারণত পিতার গোত্র প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং, বাই গুলাবকে বাণিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই ভিত্তিতে বিবাহটি বৈধ বলে গণ্য করা হয়।

আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, শাস্ত্রীয় গ্রন্থ এবং টীকা অনুযায়ী, যদিও অনুলোম বিবাহকে আদর্শ বিবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, তবুও এটি আইনত স্বীকৃত। মনুস্মৃতি এবং যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি অনুলোম বিবাহকে অনুমোদন করেছে, তবে এমন বিবাহের প্রতি সাধারণ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই শাস্ত্রগুলো অনুলোম বিবাহ নিরুৎসাহিত করলেও এটিকে সরাসরি নিষিদ্ধ করেনি। বিজ্ঞানেশ্বরের মিতাক্ষরা টীকা অনুলোম বিবাহকে পুত্রসন্তান জন্মদানের জন্য বৈধ হিসেবে স্বীকৃত দিয়েছে, যদিও এটি নিয়মিত চর্চা হিসেবে সুপারিশ করা হয়নি। নীলকণ্ঠের মায়ুখ মিতাক্ষরার এই মতামতকে সমর্থন করে যে, অনুলোম বিবাহ বৈধ এবং নিষিদ্ধ নয়।

আদালত এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, হিন্দু আইনের অধীনে অনুলোম বিবাহ বৈধ, যদিও সামাজিক অসন্তোষ বা আধুনিক যুগে এর প্রচলন কমে গেছে। প্রাচীন শাস্ত্র এবং সেগুলোর নির্ভরযোগ্য টীকা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে এই ধরনের বিবাহকে অনুমোদন দিয়েছে।


অনুবাদক :
১. মো. আল আমিন

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share