নিখিল চন্দ্র হালদার বনাম রাষ্ট্র (২০০১)

Nikhil Chandra v State Case FP BN

নিখিল চন্দ্র হালদার বনাম রাষ্ট্র

রেফারেন্স : 54 DLR 148

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী : নিখিল চন্দ্র হালদার
বিবাদী : রাষ্ট্র

ঘটনা :

ভুক্তভোগী হ্যাপি রানি হালদার দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তার প্রতিবেশী নিখিল চন্দ্র হালদার তাকে হঠাৎ একটি দা (বড় ধারালো অস্ত্র) দিয়ে আক্রমণ করেন। উক্ত আঘাতের ফলে ভুক্তভোগী মৃত্যুবরণ করেন। ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে তার পরিবারের সদস্যরা ছুটে গেলে তারা দেখতে পান, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি তার ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখেন এবং তার বাড়ির সামনে রক্তমাখা দা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা জানালা ভেঙে অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। উল্লেখ্য, আটকের মুহূর্তে অভিযুক্ত কোনো ধরনের প্রতিরোধ করেননি।

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়। তবে, অভিযুক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় বিচার কার্যক্রম চালানোর মতো মানসিক অবস্থায় ছিলেন না। তাকে স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাবনা জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত সুস্থ হলে, তাকে দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত করা হয়। দায়রা জজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে জেল আপিল দায়ের করা হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং তাই দণ্ডবিধির ৮৪ ধারার অধীনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।

ইস্যু :
১. দণ্ডবিধির ধারা ৮৪ এর অধীনে আইনের দৃষ্টিতে অপ্রকৃতগ্রস্থ (legal insanity) পরীক্ষা কী?
২. আইনের দৃষ্টিতে অপ্রকৃতগ্রস্থ প্রমাণের দায়িত্ব কার উপর বর্তাবে এবং এই প্রমাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মানদণ্ড কী হবে?

সিদ্ধান্ত :

হাইকোর্ট বিভাগ মন্তব্য করেছে যে, মানসিক অসুস্থতার কারণে ফৌজদারি দায় থেকে অব্যাহতি পেতে হলে প্রমাণের দায় অভিযোগকারীর ওপর নয়, বরং অভিযুক্তের ওপর বর্তায়। তবে, সাধারণ ফৌজদারি মামলার মতো “সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ” করার প্রয়োজন নেই। বরং, “সম্ভাবনার ভারসাম্য” বা প্রমাণের প্রাধান্য অনুযায়ী মানসিক অসুস্থতার দাবি প্রমাণ করাই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্তের ওপর প্রমাণের দায় দেওয়ানি মামলার মতোই হবে, তার বেশি নয়।

তবে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের তদন্তে অবহেলা নিয়েও সমালোচনা করেন, কারণ তারা অভিযুক্তের মানসিক অবস্থার বিষয়ে ঘটনাকালের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। আদালত উল্লেখ করেন, দণ্ডবিধির ৮৪ ধারার অধীনে দায়মুক্তি পাওয়ার জন্য অপরাধ সংঘটনের সময় অভিযুক্ত মানসিকভাবে অসুস্থ থাকতে হবে, অপরাধের আগে বা পরে নয়। বিচারপতি এ.বি.এম খায়রুল হক বলেন, ❝৮৪ ধারায় নির্ধারিত আইনি পরীক্ষায় প্রমাণ করতে হবে যে, অপরাধ করার সময় অভিযুক্ত এমন মানসিক অবস্থায় ছিলেন, যেখানে তিনি তার কাজের প্রকৃতি ও পরিণতি বুঝতে অক্ষম ছিলেন বা তার কাজ ভুল কিংবা আইনের পরিপন্থি তা বোঝার সক্ষমতা ছিল না।❞

অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় নিখিল চন্দ্র হালদার মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, তা প্রমাণ করার জন্য কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, আর শুধু নিষ্ঠুরতার মাত্রা, কোন ব্যক্তিকে আইনের দৃষ্টিতে উন্মাদ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে, তার পূর্ববর্তী মানসিক অসুস্থতা তথ্য, পরবর্তীতে স্কিজোফ্রেনিয়ার নির্ণয় এবং নির্লিপ্ত আচরণ আদালতের নিকট আইনের দৃষ্টিতে তার উন্মাদনা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল বলে বিবেচিত হয়।

ফলশ্রুতিতে, আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে, রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে “অপরাধমূলক মনোভাব” বা “অপরাধ করার মানসিকতা” প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করেন। তবে, অভিযুক্তকে মানসিক হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন থাকার নির্দেশ প্রদান দেন।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৮৪
  2. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
    • ধারা : ১০৫
  3. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
    • ধারা : ৪৭১(১)
  4. মানসিক রোগ আইন, ১৯১২ (রহিত)
    • ধারা : ৩(৪) ও ২৪

অনুবাদক :
১. রোজিনা আকতার নিশু
২. মো. আল আমিন

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share