কুদরত-ই-এলাহী পনির বনাম বাংলাদেশ (১৯৯২)

কুদরত-ই-এলাহী পনির বনাম বাংলাদেশ (১৯৯২)

কুদরত-ই-এলাহী পনির বনাম বাংলাদেশ

সাইটেশন : 44 DLR (AD) 319

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী : কুদরত-ই-এলাহী পনির এবং আহসানুল্লাহ
বিবাদী : বাংলাদেশ [পক্ষে : সচিব, স্থানীয় সরকার, গ্রামীণ উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (স্থানীয় সরকার বিভাগ), বাংলাদেশ সরকার, ঢাকা এবং অন্যান্য]

ঘটনা :

জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনামলে, স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ -এর অধীনে উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়। উক্ত স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো গঠিত হতো নির্বাচিত চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের সমন্বয়ে। তাদের স্থানীয় প্রশাসন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার থেকে তহবিল প্রদান করা হতো।

এই ব্যবস্থার অধীনে প্রথম নির্বাচন ১৯৮৫ সালে এবং দ্বিতীয় নির্বাচন ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত হয়। আপিলকারীগণ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে যথাক্রমে সোনারগাঁও এবং গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারিত ছিল কিন্তু এক বছর পূর্ণ না হতেই সরকার ‘বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) (রহিত) অধ্যাদেশ, ১৯৯১‘ জারি করে বিদ্যমান উপজেলা পরিষদগুলো বিলুপ্ত করে দেয়। পরবর্তীতে এই অধ্যাদেশটি ১৯৯২ সালে সংসদে আইন হিসেবে গৃহীত হয়। আপিলকারীগণ এই বিলুপ্তকরণের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। তারা দাবি করেন যে, বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ, বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৯, ১১, ৫৯ এবং ৬০-কে লঙ্ঘন করেছে।

ইস্যু :
১. ১৯৯১ সালের বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি অসাংবিধানিক ছিল কি না, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯, ১১, ৫৯ এবং ৬০-এর লঙ্ঘন করে।
২. উপজেলা পরিষদগুলি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৯-এর অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচ্য কি না।
৩. অনুচ্ছেদ ৯৩ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা কি সংসদের আইন প্রণয়নের কর্তৃত্বকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার শামিল?
৪. বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি (পরবর্তীতে আইন) একটি ‘ছদ্মবেশী আইন’ (কালারেবল লেজিসলেশন) ছিল কি না।

যুক্তিতর্ক :

আপিলকারীগণের যুক্তি :
আপিলকারীগণের পক্ষে আমিরুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, যদিও আদালত কোনো মূলনীতির বাস্তবায়ন করতে পারে না, তবে সংবিধানের যেকোনো বিধান, যার মধ্যে মূল নীতিসমূহও অন্তর্ভুক্ত, তার সঙ্গে অসামঞ্জস্যতার কারণে কোনো আইনকে বাতিল ঘোষণা করতে পারে। তিনি বাংলাদেশের পটভূমিতে স্থানীয় সরকারের বিবর্তন এবং অস্তিত্বের দীর্ঘ ইতিহাসের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি যুক্তি দেন যে, সংবিধান এই ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং অনুচ্ছেদ ৯-এর অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে।

ভারতের উদ্ধৃতি টেনে আপিলকারীগণের পক্ষে ড. কামাল হোসেন বলেন, যদিও আদালত সরাসরি কোনো মূল নীতির বাস্তবায়ন করতে পারে না, তবে সংবিধানের কিছু নির্দেশনামূলক নীতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা দূর করতে সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে ভারতীয় আদালত উপযুক্ত নির্দেশনা প্রদান করেছে। তিনি আরও যুক্তি দেন যে, অধ্যাদেশটি অসাংবিধানিক ছিল, কারণ এটি সংসদের অধিবেশন শুরুর মাত্র ২০ দিন আগে জারি করা হয়, একইসাথে সে মুহূর্তে এরূপ কোনো বিশেষ পরিস্থিতি ছিল না যা সংসদ কর্তৃক আইন প্রণয়নের নিয়মকে এড়িয়ে অধ্যাদেশ জারিকে বৈধতা দিতে পারে।

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ যুক্তি দেন যে, উক্ত আইনটি একটি ‘ছদ্মবেশী আইন’ (কালারেবল লেজিসলেশন) ছিল, কারণ “দৃশ্যত এটি একটি বিলুপ্তি-সংক্রান্ত আইন, কিন্তু আদতে এটি উপজেলা পরিষদগুলিকে বহাল রেখেছে এবং পরিষদের অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং সুবিধাগুলি সরকারের হাতে ন্যস্ত করেছে। ফলে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৯ এবং ৬০ লঙ্ঘিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, আইন প্রণয়নের পেছনের উদ্দেশ্যগুলি অপ্রাসঙ্গিক, আর ‘ছদ্মবেশী আইন’ (কালারেবল লেজিসলেশন) সম্পর্কিত প্রশ্নটি তখনই ওঠে যখন কোনো কিছু সরাসরি করা সম্ভব হয় না বিধায় পরোক্ষভাবে সম্পাদন করা হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৯ এবং ৬০ আইনসভাকে আইন প্রণয়নের একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়, যা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি প্রণয়নের সময় লঙ্ঘন করা হয়েছে।

বিবাদীপক্ষের যুক্তি:
বিবাদীপক্ষ যুক্তি দেন যে, উপজেলা পরিষদগুলি একটি নির্বাচিত সরকারের দ্বারা বিলুপ্ত করা হয়েছে, কারণ সেগুলি অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ছিল না এবং নিরর্থক কার্যক্রমে সরকারি অর্থ ব্যয় করছিল। ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশের পরে, উক্ত বিষয়টি পর্যালোচনা এবং সুপারিশ প্রদানের জন্য “স্থানীয় সরকার পর্যালোচনা কমিশন” নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। বিবাদীপক্ষ আরও যুক্তি দেন যে, স্থানীয় সরকারের সংবিধান সবসময় ওই সময়ে ক্ষমতায় থাকা সরকারের নীতির উপর নির্ভরশীল। যা ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন থেকে কার্যকর হয়ে আসছে। যদিও পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে উন্নত কাঠামো তৈরির উদ্দেশ্যে বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ (যেটি পরে আইন হিসেবে গৃহীত হয়) দ্বারা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল যেটি অনুচ্ছেদ ৯-এর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। কারণ, সরকার তার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলি পরিবর্তন বা পুনর্গঠনের অধিকার রাখে। তাদের যুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্থাগুলি বাতিল বা পুনর্গঠন করার ক্ষমতা ছিল, এবং এটিও সেরূপ একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন মাত্র।

অ্যাটর্নি-জেনারেল আমিনুল হক যুক্তি দেন যে, বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ/আইন দ্বারা বিলুপ্ত [স্থানীয় সরকার] ব্যবস্থাটি সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ছিল না। উপজেলা কোনো প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে নির্ধারিত ছিল না। আর, একটি এলাকাকে প্রশাসনিক অঞ্চল হিসাবে নির্ধারণ না করে, আইনসভা উক্ত স্থানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, একটি সংস্থাকে স্থানীয় সরকার হিসাবে গণ্য করতে হলে, উক্ত সংস্থা যে এলাকায় শাসন করবে সেই অঞ্চলকে সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রশাসনিক অঞ্চল হিসাবে নির্ধারণ করতে হবে। উপজেলা কখনোই প্রশাসনিক অঞ্চল হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত হয়নি, তাই উপজেলা পরিষদগুলি প্রকৃত স্থানীয় সরকারের কোনো সংস্থা ছিল না। ছদ্মবেশী আইন (কালারেবল লেজিসলেশন) বিষয়ে, তিনি কে. জি. নারায়ণ দেও বনাম ওড়িশা রাজ্য [AIR (1953), SC 379]-মামলার উদ্ধৃতি দেন। ‘ছদ্মবেশী আইন’ (কালারেবল লেজিসলেশন) তত্ত্বটি আইনপ্রণেতাদের সদিচ্ছা (bona fide) বা কু-ইচ্ছার (mala fide) সাথে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং এটি কোনো নির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভার ক্ষমতা কীরূপ তার সাথে সম্পর্কিত। এই মামলায় ছদ্মবেশিতা (কালারেবিলিটি) -এর প্রশ্নই উত্থাপিত হওয়ার কথা নয়, কারণ আইনটি পাস করার সময়ে আইনসভার যথাযথ এখতিয়ার ও কর্তৃত্ব বিদ্যমান ছিল।

সিদ্ধান্ত :

প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার কীভাবে গঠিত হবে এ বিষয়টি নির্ধারণ করা আইনসভার এখতিয়ারভুক্ত, তিনি উল্লেখ করেন যে, ঐতিহাসিকভাবেই বাংলার আইন ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। উপজেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়েছিল স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার উদ্দেশ্যে, সুতরাং বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, অনুচ্ছেদ ৫৯-এ কোনো এলাকাকে প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি, এবং কোথাও বলাও হয়নি যে, কোনো একটি স্তরের স্থানীয় সরকার বিলুপ্ত করার জন্য আইন প্রণয়ন করা যাবে না।

বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতার আওতায় বৈধভাবে প্রণীত হয়েছিলো কি না- এই প্রশ্নে আদালত জানান যে, সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের অধীনে অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা এরূপ কোনো অধ্যাদেশ জারির অনুমোদন দেয় না, কারণ এখানে সরকারের কাঠামো সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত ছিল। তবে, যেহেতু বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি পরবর্তীতে আইন হিসেবে সংসদে গৃহীত হয়েছিলো, তাই আপিলকারীগণের যুক্তি এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এটি সংসদে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নটি আর কোনো আইনি ব্যাখ্যার বিষয় থাকে না বরং এটি একাডেমিক বা তাত্ত্বিক বিষয় হিসেবে বিবেচ্য হয়। আর আদালত একাডেমিক বা তাত্ত্বিক বিষয় আমলে নেয় না।

শেষ অবধি আপিল বিভাগ মামলাটি খারিজ করে সরকারের পক্ষে রায় প্রদান করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের এই যুক্তির সাথে একমত হন যে, উপজেলা পরিষদসমূহ সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নয়, কারণ উপজেলাসমূহ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২(১) অনুযায়ী প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয়।

বিচারপতি এটিএম আফজাল তাঁর রায়ে উইলিয়াম ভ্যালেন্টার উক্তি উদ্ধৃতি করে বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৃত অর্থে সার্বভৌম সরকার নয়, বরং কোনো প্রদেশের সার্বভৌম সরকারের রাজনৈতিক অনুচর ও উপশাখা মাত্র। ফলে, প্রাদেশিক সংবিধান ও আইন দ্বারা অর্পিত ক্ষমতা ব্যতীত তাদের কোনো স্বতন্ত্র সার্বভৌম ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব নেই। এক কথায়, তারা সবসময় জাতীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থাকে।” (Local Government Law by William Valenta)

তবে, বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বিচারপতিগণের মধ্যে মতভেদ ছিল প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ মত দেন যে, যদি কোনো আইন রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরুদ্ধে যায়, তবুও সেটিকে বাতিল ঘোষণা করা যাবে না, কারণ সংবিধানের ৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, মূলনীতিসমূহ আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়।

বিচারপতি মোস্তাফা কামাল ব্যাখ্যা করেন যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ কোনো আইন নয়, বরং নীতিমালা মাত্র, তাই সেগুলো আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়। তবে বিচারপতি নঈমুদ্দীন আহমদ ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সংবিধানের দ্বিতীয় অংশের বিধানাবলির সাথে সরাসরি বিরোধপূর্ণ কোনো আইন সংসদে পাস হলে, তা সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদের অধীনে বাতিল ঘোষণা করা যেতে পারে। যদিও তিনি এখানে কাল্পনিক পরিস্থিতির উদ্ধৃতি করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম; এবং যদি কোনো আইন এসব নীতির সরাসরি পরিপন্থি হয়, তাহলে আদালতের সে আইন বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর মতে, “এর অর্থ এই নয় যে, যেহেতু আদালত এগুলো (রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি) বলবৎ করাতে বাধ্য করতে পারে না, নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা ইচ্ছামতো সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত বিধানসমূহকে অমান্য করতে পারবে বা তার বিরোধী কার্যকলাপ করতে পারবে।”

সর্বশেষ আপিল বিভাগ এই যুক্তি খারিজ করে দেন। প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পুনরায় ব্যাখ্যা করেন, কেন রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিসমূহ আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়। তিনি বলেন, “এই নীতিগুলোকে বিচারিকভাবে বলবৎযোগ্য না করার কারণগুলো সুস্পষ্ট। এগুলো মূলত দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য জনগণের কর্মসূচি বলে বিবেচিত, যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে, একদিনে নয়, বরং ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সম্পদ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং গণশিক্ষা সহ আরও অনেক কিছু। একটি শান্তিপূর্ণ আর্থ সামাজিক বিপ্লবের জন্য এই পূর্বশর্তগুলো বিদ্যমান আছে কি না তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর বর্তায়।”

‘ছদ্মবেশী আইন’ (কালারেবল লেজিসলেশন) প্রণয়ন বিষয়ক প্রশ্নে আদালত বিবাদীপক্ষের যুক্তিকে গ্রহণ করেন, যেহেতু আমলাদের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ চালু রাখার কোন গোপন প্রচেষ্টা ছিল না। তাই উক্ত বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ/আইনটি কোনো ‘ছদ্মবেশী আইন’ (কালারেবল লেজিসলেশন) নয়। পরিশেষে আদালত বিবাদীর পক্ষে রায় প্রদান করেন। আদালত মন্তব্য করেন, বিলুপ্তি-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ/আইন সংবিধানের ৯, ১১, ৫৯ বা ৬০ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ, উপজেলা পরিষদগুলোকে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের অধীনে স্থানীয় সরকার হিসেবে বিবেচিত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
    • অনুচ্ছেদ : ৭(২), ৮(২), ৯, ১১, ৫৯, ৬০, ৯৩, ১৫২(১)
  2. স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ, ১৯৮২
  3. স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) (রহিত) অধ্যাদেশ, ১৯৯১ [পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ২নং আইন]
    • ধারা : ২(২)(খ)

অনুবাদক :
১. রোজিনা আকতার নিশু
২. মো. আতিকুর রহমান
৩. রাইয়ান তালুকদার

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share