এসকে. শামসুর রহমান বনাম রাষ্ট্র
সাইটেশন : [1990] 42 DLR AD 200
জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ
আপিলকারী : এসকে. শামসুর রহমান (নিম্ন আদালতে বিবাদীপক্ষ)
বিবাদী : রাষ্ট্র (নিম্ন আদালতে বাদীপক্ষ)
ঘটনা :
আপিলকারীকে ১৯৮১ সালের ২৫শে মার্চ খুলনার ফুলতলার সাধুর বটতলার নিকটবর্তী স্থানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরতে থাকা সাখাওয়াত হোসেন (সাকু) নামক এক ব্যক্তিকে রিভলভার দিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ মূলত ভুক্তভোগীর মৃত্যুর পূর্বে দেওয়া মৃত্যুকালীন জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মৃত ব্যক্তি ও আপিলকারী একে অপরের পরিচিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের মতে, ঘটনার দিন নিহত ব্যক্তি আপিলকারী শেখ শামসুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভুক্তভোগী যখন মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে আপিলকারীও ছিলেন। হঠাৎ, আপিলকারী তাকে থামান এবং মাথায় গুলি করেন। তিনি (ভুক্তভোগী) পালানোর চেষ্টা করলে তার বুকেও দুটি গুলি লাগে। একজন ভ্যানচালক তাকে আহত অবস্থায় পান এবং বাড়ি পৌঁছে দেন। সেখানে তিনি তার ভাই ও স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনে ঘটনাটি মৌখিকভাবে বর্ণনা করেন। পরবর্তীতে তাকে খুলনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার আনুষ্ঠানিক জবানবন্দি গ্রহণ করেন, যা পরবর্তীতে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (FIR) এবং বিচার প্রক্রিয়ায় মূল সাক্ষ্যরূপে ব্যবহার করা হয়।
অভিযুক্তের আইনজীবী ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিটি বানোয়াট। এছাড়াও, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যেটি হলো, ঘটনার পক্ষে সহায়ক প্রমাণের অভাব। গুলিবর্ষণের ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীও ছিল না। আসামিপক্ষ যুক্তি দেন যে, কোনো দোষ শুধু একটি সন্দেহজনক ও ত্রুটিপূর্ণ মৃত্যুকালীন জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়।
ইস্যু :
১. কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলে শুধু মৃত্যুকালীন জবানবন্দির (Dying Declaration) উপর ভিত্তিতে করে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে কি না।
২. সুনির্দিষ্ট কিছু সাক্ষীর জবানবন্দি না নেয়ায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দি অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায় কি না।
সিদ্ধান্ত :
আপিল আবেদনে বিচারপতি এটিএম আফজালের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিটি গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করেন। আদালত রায় দেন যে, যদি মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নির্ভরযোগ্য, সমর্থিত এবং সন্দেহমুক্ত হয়, তবে এককভাবে শুধু মৃত্যুকালীন জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে দণ্ডাদেশ প্রদান করা যাবে। সাক্ষ্য সমর্থন (Corroboration) আইনের বিধি নয়, এটি কেবল একটি বিচক্ষণতার নীতি। আর সমর্থনকারী প্রমাণ (corroborative evidence) কোনো সাক্ষ্য বা বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।
আদালত এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল এবং তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের দ্বারা সমর্থিত। এছাড়াও, আদালত উল্লেখ করেন যে, ভুক্তভোগী [অভিযুক্ত] আপিলকারীকে যথাক্রমে পুলিশের নিকট দেওয়া লিখিত বক্তব্য এবং পরিবারের সদস্যদের নিকট দেওয়া মৌখিক জবানবন্দি, উভয় ক্ষেত্রেই স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছিলেন।
ছোটখাটো কিছু অসামঞ্জস্যতা এবং কিছু সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ না করার বিষয়টি মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে অগ্রহণযোগ্য করে না। অতএব, এক্ষেত্রে শুধু মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দণ্ডাদেশের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিছু সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ না করার মতো পদ্ধতিগত ত্রুটির বিষয়টি আদালত স্বীকার করেন। তবে, শেষ অবধি আদালত এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, উক্ত ত্রুটিগুলো মৃত্যুকালীন জবানবন্দির বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেনি।
আদালত আপিল খারিজ করে দণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- দণ্ডবিধি, ১৮৬০
- ধারা : ৩০০
- সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
- ধারা : ৩২(১)
অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ