অ্যাশবি বনাম হোয়াইট
রেফারেন্স : 92 ER 126
জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড
বাদী : ম্যাথিউ অ্যাশবি
বিবাদী : উইলিয়াম হোয়াইট
ঘটনা :
জনাব অ্যাশবি ছিলেন ইংল্যান্ডের আয়লেসবারি অঞ্চলের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। পরবর্তী জনপ্রতিনিধি নিবার্চনের লক্ষ্যে উক্ত অঞ্চলে একটি সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। স্থানীয় পুলিশের একজন কনস্টেবল, জনাব হোয়াইট, ভোটকেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে পালন করছিলেন। জনাব অ্যাশবি ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে আসলে জনাব হোয়াইট তাকে ভোট প্রদানে বাধা দেন। জনাব হোয়াইট দাবি করেন যে, জনাব অ্যাশবি আয়লেসবারি অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী নন এবং নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোট প্রদানের জন্য ভোটারদের ঐ অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া বাধ্যতামূলক। অতএব, জনাব অ্যাশবি উক্ত নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। যদিও, নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় জনাব অ্যাশবি যে প্রার্থীকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন, সেই প্রার্থীই নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। পরবর্তীতে, জনাব অ্যাশবি তার ভোট দেওয়ার আইনি অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে জনাব হোয়াইটের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ইস্যু : প্রকৃতপক্ষে কোন প্রকার ক্ষতি না হলেও শুধু মাত্র আইনি অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের জন্য জনাব অ্যাশবি কি জনাব হোয়াইটের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন?
যুক্তিতর্ক :
বাদীপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, বাদী জনাব অ্যাশবি, একজন যোগ্য ভোটার ছিলেন। একজন যোগ্য ভোটারের জন্য “ভোট প্রদানের অধিকার” একটি বিধিবদ্ধ অধিকার এবং কোনো ব্যক্তি এই অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করতে পারে না। আর যদি কেউ বাধা প্রদানের চেষ্টা করে তবে তা ঐ ব্যক্তির আইনগত অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, বিবাদীপক্ষের আইনজীবী যুক্তি উত্থাপন করেন যে, যেহেতু জনাব অ্যাশবি যে প্রার্থীকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন, তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। সেহেতু, জনাব অ্যাশবির ভোট যদি গণনা করাও হত, তবুও নির্বাচনের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসত না। অতএব, জনাব অ্যাশবিকে ভোটদানে বিরত রাখা প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্ষতি ঘটায়নি।
সিদ্ধান্ত :
হাউজ অব লর্ডস-এ, প্রধান বিচারপতি লর্ড হোল্ট এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, ভোট প্রদানের মাধ্যমে একজন নাগরিক তার প্রতিনিধি নির্বাচন করে সংসদে পাঠান, যিনি তার পক্ষে কাজ করবেন এবং আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবেন। অতএব, ভোটাধিকারকে তুচ্ছ বলে বিবেচনা করা যায় না। নির্বাচনে ভোট দেওয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। আর, এই অধিকার থেকে বাদীকে বঞ্চিত করা একটি বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচ্য।
এ পর্যায়ে আদালত “Injuria Sine Damnum” নামে পরিচিত একটি আইনি নীতিকে পুনর্ব্যক্ত করেন। যার অর্থ হলো “ক্ষতি ছাড়াই আইনি অধিকার লঙ্ঘন”। আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে, সব অপরাধের জন্য শারীরিক বা আর্থিক ক্ষতি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। আর্থিক বা শারীরিক ক্ষতি না হলেও আইনি অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে আর প্রতিটি অধিকার লঙ্ঘনের সাথে ক্ষতি সম্পর্কিত। সুতরাং, যখন একজন ব্যক্তিকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তখন উক্ত অধিকার লঙ্ঘনই একটি ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি লর্ড হল্ট বলেন, ❝যদি অভিযোগকারীর একটি অধিকার থাকে, তবে সেই অধিকার রক্ষা ও ভোগ করার উপায় থাকতে হবে এবং সেই অধিকার ভোগ করতে গিয়ে যদি তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে তার জন্য প্রতিকারও থাকতে হবে। সত্যি বলতে, প্রতিকার ছাড়া অধিকার কল্পনা করাটাই অর্থহীন; কারণ অধিকার না থাকলে প্রতিকারও থাকে না, আর প্রতিকার না থাকলে অধিকারও অর্থহীন।❞
আদালত “Ubi Jus Ibi Remedium” নামের একটি ল্যাটিন নীতির কথা উল্লেখ করেন, যার অর্থ হলো, “যেখানে অধিকার আছে, সেখানে প্রতিকারও আছে”। যেহেতু ভোট দেওয়ার অধিকার একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার, সেহেতু, এই অধিকার প্রয়োগে যেকোনো বাধা একটি আইনি অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে । অতএব, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
সর্বশেষ, ৫০-১৬ ভোটের ভিত্তিতে হাউজ অব লর্ডস, বাদী জনাব অ্যাশবির পক্ষে রায় ঘোষনা করেন।
সংশ্লিষ্ট প্রবাদ :
ন্যায়পরায়নাতা (ইক্যুইটি) প্রতিকারহীন ভাবে কোন অন্যায়কে যেতে দেয় না : এটি ইক্যুইটির একটি মৌলিক নীতি। যার অর্থ হলো, যেখানে সাধারণ আইনের কঠোর প্রয়োগ ন্যায়বিচার প্রদান করতে বা যথাযথ প্রতিকার দিতে ব্যর্থ হয়, সেখানে ইক্যুইটি হস্তক্ষেপ করে যাতে কোনো অন্যায় প্রতিকারহীন না থাকে। এই নীতিটি আইনের কঠোর প্রয়োগের বাইরে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং ন্যায্যতাকে গুরুত্ব দেয়। এটি একটি ল্যাটিন নীতির সাথে প্রায় একই ধারণা প্রকাশ করে, ubi jus ibi remedium, যার অর্থ “যেখানে অধিকার আছে, সেখানে প্রতিকারও আছে।”
অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণাপ্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ