রাইল্যান্ডস বনাম ফ্লেচার
রেফারেন্স : [1868] UKHL 1
জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড
বাদী : রাইল্যান্ডস (বিবাদী, নিম্ন আদালতে)
বিবাদী : ফ্লেচার (বাদী, নিম্ন আদালতে)
ঘটনা :
ফ্লেচার একটি ভূগর্ভস্থ খনির মালিক ছিলেন, অন্যদিকে রাইল্যান্ডস উক্ত খনি সংলগ্ন একটি কারখানার মালিক ছিলেন। রাইল্যান্ডস তার কারখানার জন্য ফ্লেচারের খনি সংলগ্ন জমিতে একটি জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। উক্ত জলাধারটি নির্মাণের জন্য রাইল্যান্ডস একজন ঠিকাদার নিয়োগ করেন। নির্মাণকাজ চলাকালে প্রকৌশলী জমির নিচে পাঁচটি শ্যাফ্টের (সুড়ঙ্গ) সন্ধান পান, যা মাটি এবং আবর্জনার নিচে ঢাকা ছিলো। প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার কোনো পক্ষই গর্তগুলো যথাযথভাবে বন্ধ করার পদক্ষেপ না নিয়েই কাজ চালিয়ে যান। রাইল্যান্ডসকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। নির্মাণ শেষে যখন পানি দিয়ে জলাধারটি পূর্ণ করা হয়, তখন পানির ওজনের ফলে, জলাধারের নিচে থাকা শ্যাফ্টগুলো ভেঙে পড়ে। এর ফলে জলাধারের পানি ভাঙা শ্যাফ্টগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফ্লেচারের খনিকে প্লাবিত করে এবং খনির ভেতরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফ্লেচারের খনিতে এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য তিনি রাইল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ইস্যু : ১. সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এমন কোন বস্তু/উপাদান দুর্ঘটনাক্রমে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য কি বিবাদীকে দায়ী করা যেতে পারে?
সিদ্ধান্ত :
কোর্ট অফ এক্সচেকার :
কোর্ট অফ এক্সচেকার রায় প্রদান করেন যে, বাদী তার মামলার যথাযথ কারণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং এই কারণে বিবাদীকে ক্ষতির জন্য দায়ী করা যাবে না।
এক্সচেকার চেম্বার আদালত :
পূর্বে দেয়া এক্সচেকার আদালতের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে বিচারকগণ সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, ফ্লেচার তার মামলার যথাযথ কারণ দেখাতে সমর্থ হয়েছেন এবং, রাইল্যান্ডস ফ্লেচারের খনি ক্ষতিসাধনের জন্য দায়ী। বিচারপতি ব্ল্যাকবার্ন বলেন, ❝আমরা মনে করি প্রকৃত আইন এরূপ যে, যদি কোন ব্যক্তি তার নিজস্ব উদ্দেশ্যে তার জমিতে কোনো কিছু নিয়ে আসে এবং সেখানে তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যা ছড়িয়ে বা পালিয়ে গেলে ক্ষতি হতে পারে, তাহলে উক্ত বস্তুটি ঐ ব্যক্তির নিজের দায়িত্বেই রাখতে হবে; এবং যদি তিনি এটি করতে ব্যর্থ হন এবং এর ফলে কোন ক্ষতি সংঘটিত হয়, তবে তার জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে দায়ী থাকবেন।❞
হাউস অফ লর্ডস :
হাউস অফ লর্ডস এক্সচেকার চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত পোষণ করেন। রাইল্যান্ডসের জমিতে পানি প্রাকৃতিকভাবে আসেনি। বরং এটি বাইরে থেকে তার নিজের প্রয়োজনে আনা হয়েছিল। যদিও জলাধারে সংরক্ষিত পানি কোন ক্ষতিকর বস্তু নয় তবে, যখন সেই পানি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেরিয়ে এসে একটি খনিকে প্লাবিত করে, তখন এটি প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি ঘটাতে পারে। হাউস অফ লর্ডস বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিবাদীকে উক্ত ঘটনার জন্য কঠোরভাবে দায়বদ্ধ (strictly liable) হিসেবে গণ্য করা হবে। লর্ড ক্র্যানওর্থ বলেন, ❝যদি উক্ত বস্তু ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন ক্ষতি ঘটায়, তবে উক্ত ঘটনার জন্য তিনি দায়ী হবেন, এতে তিনি যতই সাবধানতা অবলম্বন করুন না কেন এবং ক্ষতি প্রতিরোধে তিনি যতই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন না কেন।❞ ফলস্বরূপ, হাউস অফ লর্ডস কোর্ট অফ এক্সচেকার চেম্বারের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখেন এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য রাইল্যান্ডসকে দায়ী করেন।
কঠোর দায়বদ্ধতা’র ক্ষেত্রে টর্টের (Tort of Strict Liability) বিকাশ :
টর্টের “কঠোর দায়বদ্ধতা” (Strict Liability) নীতি অনুযায়ী, পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও বিবাদীকে দায়ী করা হয়। নিম্নলিখিত শর্তগুলোর উপস্থিতিতে একজন বিবাদীকে “কঠোর দায়বদ্ধতা” নীতির অধীনে দায়ী করা যেতে পারে :
- বিবাদী বাইরের উৎস থেকে জমিতে বস্তু নিয়ে এসেছেন এবং তা জমিতে সংরক্ষণ করেছেন।
- বস্তুর সংরক্ষণ জমির স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যবহারের আওতাভুক্ত নয়।
- উক্ত বস্তু জমি থেকে বেরিয়ে গেলে সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
- বস্তুটি জমি থেকে বেরিয়ে, পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে কঠোর দায়বদ্ধতার এই নীতিটি অনেক বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমানে রাইল্যান্ডস বনাম ফ্লেচার (১৮৬৮) মামলায় গৃহীত নীতিগুলি অনেক স্থানে পূর্বের মতো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় না।
অনুবাদক :
১. ইমরান হোসেন ইমন
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ