শুদ্ধা বনাম রাষ্ট্র (১৯৫৭)

শুদ্ধা সর্দার এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র

শুদ্ধা সর্দার এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র

সাইটেশন : 9 DLR (1957) 645

জুরিসডিকশন : পাকিস্তান

আপিলকারী : শুদ্ধা সর্দার এবং অন্যান্য (নিম্ন আদালতে বিবাদীপক্ষ)
বিবাদী : রাষ্ট্র (নিম্ন আদালতে বাদীপক্ষ)

ঘটনা :

১৯৫৫ সালের ১২ নভেম্বর, রাজশাহীর বোয়ালিয়া মৌজায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নাসির সরদারকে (ওরফে নাসিরউদ্দিন সর্দার) আক্রমণ করার জন্য আপিলকারিদের মাঝে ৯ জন লাঠি ও সালফি (একধরনের অস্ত্র) নিয়ে একটি বেআইনি সমাবেশ করে। [মৃত ব্যক্তি] নাসিরউদ্দিন সর্দার সি.এস. প্লট নং, ১৯৪৯ এর একটি উপ-প্লটের স্বত্বাধিকারী দাবি করতেন; জমিতে কাজ করা অবস্থায় আব্দুস সাত্তার, বাবর উদ্দিন এবং বুধাই তাকে লাঠি ও সালফি নিয়ে ধাওয়া করে। অন্য একটি জমির (গণ মণ্ডলের জমি) কাছে লুকিয়ে থাকা আরও ৬ জন ব্যক্তি (শুদ্ধা সর্দার,আতাব ওরফে আতাবউদ্দিন, ময়েজউদ্দিন, দোলা কুশা, বদরউদ্দিন) [মৃত] নাসিরউদ্দিনের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। ৯ জনের সম্মিলিত আক্রমণে তিনি গুরুতর আহত হন। পরের দিন নওগাঁ হাসপাতালে নাসির মৃত্যুবরণ করেন। সাক্ষীগণ – যাদের মধ্যে নাসিরের ছেলে নজরুল ইসলাম (প্রত্যক্ষ সাক্ষী-৩), তার ভ্রাতুষ্পুত্র আব্দুল আজিজ (প্রত্যক্ষ সাক্ষী-১) এবং পথচারী তালের আলী (প্রত্যক্ষ সাক্ষী-৬) আপিলকারীদের কার্যক্রম সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করেন। আদালত আপিলকারীদের যৌথ উদ্দেশ্য এবং প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে সৃষ্ট ক্ষোভের প্রেক্ষিতে পূর্বপরিকল্পিত ও দলগত আক্রমণের জন্য তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা সৃষ্টি (ধারা ১৪৮-পাকিস্তান দণ্ডবিধি) এবং নিন্দনীয় নরহত্যার (ধারা ৩০৪-পাকিস্তান দণ্ডবিধি) অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। মূল বিচারে আপিলকারীদের পাকিস্তান দণ্ডবিধির ধারা ১৪৮ এবং ধারা ৩০৪/৩৪ এর অধীনে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উভয় ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং  কয়েকজনকে কেবল ধারা ১৪৮ এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ফলে, এই ৯ জন আসামি ২টি আপিল দায়ের করে (১৯৫৬ সালের আপিল নং ৪২৫ এবং ৪৩৭ থেকে ৩৭৮ পর্যন্ত)। তবে, বিচারকগণ আপিল দুটিকে একীভূত করে শুনানি গ্রহণ করেন। কেননা, আপীলকারীদের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন যুক্তিসমূহ তুলে ধরা হলেও, অনেক যুক্তিই সকল আপীলকারীর জন্যই প্রযোজ্য ছিল।

ইস্যু :
১. একজন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক রেকর্ড করা মৃত্যুকালীন জবানবন্দি কি অতিরিক্ত কোন প্রমাণ ছাড়াই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য, বিশেষ করে সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩ এবং ধারা ৮০ অনুসারে?
২. প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্টটি কি সাক্ষীদের মিথ্যা বলা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারে?
৩. বিচারক কি জুরিকে ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সঠিক তথ্য এবং নির্দেশনা দিয়েছিলেন?

সিদ্ধান্ত :

আপিলকারিগণের প্রথম অভিযোগ ছিল, বিজ্ঞ বিচারক মৃত্যুকালীন জবানবন্দির বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। আপিলকারীগণ বলেন, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈধ প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হওয়া উচিত ছিল কারণ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের এ যুক্তির পক্ষে তারা সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩ এবং ধারা ৮০ এবং সুরজ বালি বনাম রাষ্ট্র [A.I.R 1934 All. 840] মামলার উপর উদ্ধৃতি করেন।

আদালত রাষ্ট্র বনাম সামিরুদ্দিন [ILR 8 Cal. 211] মামলার রায় এবং কলকাতা হাইকোর্টের অন্যান্য সিদ্ধান্তসমূহ, যেখানে এ বিষয়টি সমর্থন করে যে, মৃত্যুকালীন জবানবন্দির জন্য প্রমাণ প্রয়োজন – উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রমাণ ছাড়া এটিকে (মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে) একমাত্র প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, আদালতের রেকর্ডে কেবল একটি নথির উপস্থিতি এটিকে প্রমাণ হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রহণের বিষয়কে বৈধতা দেয় না। সাক্ষ্য আইন অনুসারে এটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপিত এবং প্রমাণিত হতে হবে। অধিকন্তু, আদালত স্পষ্ট করেছেন যে, সাক্ষ্য আইনের ধারা ৮০ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে বৈধতা দেয় না, কারণ, এই ধারাটি সাক্ষ্য বা স্বীকারোক্তি রেকর্ডের মতো নির্দিষ্ট নথির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আদালত এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, যদি মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করাও হয়, তবুও এটি সেই ব্যক্তির বক্তব্য কিনা তা প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন।

আপিলকারীগণ দাবি করেন যে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আপিলকারীদের (ময়েজ এবং দোলা) নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে, তদন্তকারী কর্মকর্তা বিচারের জন্য নয়জন আপিলকারীকে হাজির করেন এবং আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন। সুতরাং, বিবাদীপক্ষ যুক্তি দেয় যে, আদালতের রায় সাক্ষীদের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। এই বিষয়ে, আদালত বলেন, বিজ্ঞ বিচারক জুরিকে বলার ক্ষেত্রে সঠিক ছিলেন যে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (FIR) প্রাথমিক প্রমাণ নয় এবং এটি যুক্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে না যে, সাক্ষীরা মিথ্যা বলছেন, কেবল যিনি রিপোর্ট করেছেন তিনি ছাড়া। আদালত স্পষ্ট করে বলেন যে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (FIR) এ কিছু সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয়নি, তার অর্থ এই নয় যে, তাদের সাক্ষ্য অবৈধ। তাই আদালত বলেন যে, আদালতে তাদের বক্তব্য প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে যা লেখা আছে তা দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এরপর আদালত জুরিকে বিচারকের নির্দেশনার বিষয়ে আপিলকারীগণের শেষ দাবিটি উত্থাপন করেন। আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, কিছু ক্রটি থাকা সত্ত্বেও, বিচারক জুরিকে ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য এবং নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। আদালত বিচারকের নির্দেশনা পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মূল বিষয়গুলো এবং সাক্ষ্যসমূহ যথাযথভাবে সমাধান করা হয়েছে এবং যথেষ্ট ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্ট সমস্ত যুক্তি বিবেচনা করে আপিলে উত্থাপিত দাবিগুলোর কোন ভিত্তি খুঁজে পায়নি। এই মামলায় আপিলগুলো খারিজ করা হয় এবং আপিলকারীগণকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা বহাল রাখা হয়।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ১৪৮, ৩০৪
  2. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
    • ধারা : ৩, ৮০
  3. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮

অনুবাদক :
১. ফাহিম আহমেদ

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ


Cite this Page:

OSCOLA

APA

Bluebook

Share