আর. বনাম বেডিংফিল্ড
সাইটেশন : (1879) 14 Cox C.C. 341
জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড
বাদী : আর. (রেজিনা/রাষ্ট্র)
বিবাদী : হেনরি বেডিংফিল্ড
ঘটনা :
অভিযুক্ত হেনরি বেডিংফিল্ডের সাথে নিহত মহিলার পূর্বসম্পর্ক ছিল। তবে তাদের সম্পর্কের মাঝে কিছু বিরোধ ছিল। অভিযোগ ছিল যে, বেডিংফিল্ড উক্ত মহিলার প্রতি ক্ষোভ পোষণ করতেন, কারণ তিনি বেডিংফিল্ডকে দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। ফলে বেডিংফিল্ড তাকে হত্যার হুমকি সহ সহিংস হুমকি দিতে শুরু করেছিলেন।
নিহত মহিলা একটি লন্ড্রির ব্যবসা পরিচালনা করতেন এবং তার দুজন সহকারী তাকে কাজে সাহায্য করতেন। ঘটনার আগের রাতে তিনি স্থানীয় পুলিশকে বেডিংফিল্ডের হুমকির কথা জানিয়ে তাদেরকে (পুলিশকে) তার বাড়ির ওপর নজর রাখার অনুরোধ জানান। পরদিন সকালে বেডিংফিল্ড তার বাড়িতে আসেন, যা তার জন্য অস্বাভাবিক ছিল। তারা একসঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান, এরপর তিনি (বেডিংফিল্ড) দোকানের যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। মহিলার দুই সহকারী আসেন এবং তাকে মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর বেডিংফিল্ড আবার ফিরে আসেন এবং যখন দুই সহকারী বাড়ির উঠোনে ছিলেন, তিনি মহিলার কক্ষে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর, আহত মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি গলা ধরে চিৎকার করছিলেন এবং তার গলা থেকে গভীর জখমের কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তিনি তার সহকারীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, “ওহ, আন্টি, দেখো বেডিংফিল্ড আমার সাথে কি করেছে!” কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আঘাতের কারণে তিনি মারা যান।
ইস্যু :
১. মৃত্যুর পূর্বে মৃত মহিলাটির করা বক্তব্য কি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য?
২. উক্ত বক্তব্য কি “রেস গেসটা” (Res Gestae) এর ব্যতিক্রমের অধীনে পড়ে?
যুক্তিতর্ক :
১. যদিও রাষ্ট্রপক্ষ সরাসরি নিহতের মৃত্যুকালীন বিবৃতি (Dying Declaration) উপস্থাপন করেন নি, তারা প্রাথমিকভাবে এটি আদালতে প্রমাণ হিসেবে জমা দেন। তারা যুক্তি দেন যে, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই বিবৃতি দেওয়ার সময় নিহত ব্যক্তি অত্যন্ত ভীত ও আতঙ্কিত ছিলেন। তাই রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেন যে, এই বিবৃতিটি “Res Gestae” ব্যতিক্রমের আওতায় পড়ে এবং এটি প্রমাণ হিসাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োগযোগ্য।
২. বিবাদীপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন যে, ঘটনাটি হত্যা নয়, বরং আত্মহত্যা হতে পারে। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, নিহতের গলার ক্ষত ছিল অত্যন্ত গভীর, যার দৈর্ঘ্য ছিল তিন থেকে চার ইঞ্চি এবং এতে ট্রাকিয়া (শ্বাসনালি) এবং জুগুলার (ঘাড়ের) শিরা কাটা গিয়েছিল। ফলে আত্মহত্যার সম্ভাবনাকে তারা সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দেন।
১. বিবাদীপক্ষ যুক্তি দেন যে, “Res Gestae” নীতির আওতায় বিবৃতিটি গ্রহণযোগ্য হতে হলে সেটি অবশ্যই ঘটনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে দিতে হবে, পরবর্তীতে নয়। “Res Gestae” এর জন্য স্বতঃস্ফূর্ততা এবং অপরাধের সাথে ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি, যেখানে বানোয়াট বা মিথ্যা বলার কোনো সুযোগ থাকবে না। যেহেতু নিহত ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসার পর বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাই এটি ঘটনাটির ধারাবাহিক অংশ নয়।
২. এছাড়াও, চিকিৎসা সংক্রান্ত সাক্ষ্যের পর রাষ্ট্রপক্ষ নিহতের বিবৃতিকে মৃত্যুকালীন ঘোষণা (Dying Declaration) হিসেবে পুনরায় উপস্থাপন করেনি। বিবাদীপক্ষ জোর দিয়ে বলেন যে, মৃত্যুকালীন ঘোষণা আইনিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হলে ঘোষণাকারীকে অবশ্যই নিজের আসন্ন মৃত্যুর ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে। যেহেতু নিহত ব্যক্তির বিবৃতি দেওয়ার সময় তার আসন্ন মৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এটি আইনগত গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।
সিদ্ধান্ত :
প্রধান বিচারপতি লর্ড ককবার্ন রায় প্রদান করেন যে, নিহতের বিবৃতিটি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি হামলা সংগঠিত হওয়ার পর দেওয়া হয়েছিল। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, এটি মৃত্যুকালীন ঘোষণা (Dying Declaration) হিসেবেও গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ নিহত ব্যক্তি ঘোষণার কোথাও তার মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেননি। এছাড়াও, বিবৃতি দেওয়ার সময় তিনি আহত অবস্থা থেকে আরোগ্যের সমস্ত আশা হারিয়েছিলেন এমন কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, এটি “Res Gestae” এর অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না, কারণ বিবৃতিটি ঘটনাচক্র চলাকালীন সময়ে দেয়া হয় নি, বরং ঘটনার পরবর্তীতে দেয়া হয়েছিল। ফলে এটি প্রতারণার সুযোগ উন্মুক্ত রাখে। তবে, অন্যান্য প্রমাণ থেকে স্পষ্টভাবে আসামির দোষ প্রমাণিত হয়েছিল। নিহতের আঘাতের প্রকৃতি এবং ক্ষুরের (ছুরি সাদৃশ্য ধারালো বস্তু) অবস্থান দেখে এটি স্পষ্ট হয় যে, ঘটনাটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা ছিল; দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা নয়।
প্রধান বিচারপতি ককবার্ন বিচারকমণ্ডলীকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নন বরং আক্রান্ত মহিলাই হামলার পর দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন, যেন তিনি বিপদের সংকেত দিতে বা অভিযোগ করতে চাইছিলেন। এসব বিবেচনা করে আদালত বেডিংফিল্ডকে হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং মৃত্যুদণ্ডের সাজায় দণ্ডিত করেন।
সংশ্লিষ্ট নীতি:
রেস গেসটা নীতি : যখন কোনো ঘটনা মূল ঘটনার সাথে এতোটাই ওতপ্রোত ভাবে সংযুক্ত থাকে যে, দুটি ঘটনাকে একটি ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তখন তাকে রেস গেসটা বলে এবং তখন এটি প্রমাণ হিসেবেও গ্রহণযোগ্য। রেস গেসটা (Res gestae) হল (হিয়ারসে) hearsay নিয়মের একটি ব্যতিক্রম।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
- ধারা : ৬
অনুবাদক :
১. মো. আল আমিন
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ