খালেদা আখতার বনাম রাষ্ট্র (১৯৮৫)

খালেদা আখতার বনাম রাষ্ট্র (১৯৮৫)

খালেদা আখতার বনাম রাষ্ট্র

সাইটেশন : [1985] 37 DLR 275

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আবেদনকারী : মিসেস খালেদা আখতার
বিবাদী : রাষ্ট্র

ঘটনা :

অবৈধ ওষুধ তৈরি ও মজুদ করা হয়, এরূপ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মেসার্স রানা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করা হয়। পুরো ঘটনাটি ভিডিও-রেকর্ড করেছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন প্রতিবেদক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ এর ১৬ ধারার অধীনে অভিযোগ আনা হয়। বিচারকার্য চলাকালীন, বাদীপক্ষ অর্থাৎ, রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও ক্যাসেট উপস্থাপন করতে চেয়েছিল, যা আদালত দ্বারা অনুমোদিতও হয়েছিল।

প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ক্যাসেটের এই উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহারকে বাদী, খালেদা আখতার, হাইকোর্টের ঢাকা বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করেন। উক্ত বিষয়টি বিশেষভাবে উত্থাপিত হয়েছিল, কারণ সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ৩ এ প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি ভিডিও ক্যাসেটকে ‘দলিল’ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। বাদীপক্ষ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ভিডিও ক্যাসেটটি প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় কারণ এটি ১৮৭২ সালের আইন (সাক্ষ্য আইন) অনুসারে ‘ডকুমেন্ট’ (দলিল)-এর সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না। জবাবে রাষ্ট্র পক্ষে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেন যে, ভিডিও ক্যাসেটে মামলার সাথে প্রাসঙ্গিক তথ্য রয়েছে এবং এটিকে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত।

ইস্যু :
১. একটি ভিডিও ক্যাসেটকে আইন অনুযায়ী ‘ডকুমেন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে কি না এবং তা আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে কি না।

সিদ্ধান্ত :

হাইকোর্ট ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, ১৮৯৭ সালের জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এবং ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি দ্বারা ‘ডকুমেন্ট’ (দলিল)-এর সংজ্ঞা মূল্যায়ন করেন। মূল্যায়নের পর, আদালত মামলার প্রেক্ষাপটে ‘ঘটনা’ (matter) শব্দটিকে উদারভাবে ব্যাখ্যা করেন। ভারতীয় ও পাকিস্তানি বিচারব্যবস্থার বিচারিক নজির উদ্ধৃত করে আদালত বলেন, অডিও টেপ রেকর্ড দলিল হিসাবে বিবেচিত এবং প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য। আদালত আরো বলেন যে, ছবিও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। সুতরাং, শব্দ এবং ছবির একসাথে রেকর্ডিংকে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থেকে বাদ দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই, হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, একটি ভিডিও ক্যাসেট প্রকৃতপক্ষে একটি ‘দলিল’ এবং এটি আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য যদি তা মামলার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়।

সুস্পষ্ট আইনি বিধানের অনুপস্থিতির মাঝে, এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ছিল। তবে, পরবর্তীতে আইন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত, ভিডিওকে দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ করার পক্ষে এই মামলায় প্রতিষ্ঠিত যুক্তিগুলি অন্য কোনো মামলায় অনুসরণ করা হয়েছে এরূপ কোনো উদাহরণ পাওয়া যায় নি। ২০২২ সালে, সাক্ষ্য (সংশোধন) আইন, ২০২২ পাসের মাধ্যমে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩-এ ‘ডিজিটাল রেকর্ড’ বা ‘ইলেকট্রনিক রেকর্ড’-কে দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে, ভিডিও রেকর্ডসহ সকল ডিজিটাল রেকর্ড আইনত দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ২৯
  2. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
    • ধারা :
  3. জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট, ১৮৯৭
    • ধারা : ৩(১৬)
  4. মাদকদ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২
    • ধারা : ১৬

অনুবাদক :
১. ইমরান হোসেন ইমন

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share