বাংলাদেশ বনাম অধ্যাপক গোলাম আজম এবং অন্যান্য (১৯৯৪)

Bangladesh v Professor Golam Azam Case FP BN

বাংলাদেশ বনাম অধ্যাপক গোলাম আজম এবং অন্যান্য

সাইটেশন : 46 DLR (AD) 192 (1994)

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিবাদী : অধ্যাপক গোলাম আযম

ঘটনা :

বিবাদী, অধ্যাপক গোলাম আযম, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়, ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর তিনি পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭৩ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার, ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধানাবলী) আদেশ, ১৯৭২’-এর ধারা ৩ অনুযায়ী কোন প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ৩৮ জন “রাজাকার”-এর নাগরিকত্ব বাতিল করেন, যার মধ্যে বিবাদী (অধ্যাপক গোলাম আযম) ও ছিলেন।

১৯৭৬ সালের ১৭ জানুয়ারি, বাংলাদেশ সরকার, যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাদের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানায় এবং বিবাদী লন্ডন থেকে নাগরিকত্ব পুনর্বহালের জন্য আবেদন করেন, উক্ত আবেদনটি সেসময় প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপর তিনি ১৯৭৭ এবং ১৯৭৮ সালে পুনরায় আবেদন করেন এবং ১৯৭৮ সালে তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য, পাকিস্তানি পাসপোর্টে মানবিক দিক বিবেচনায় প্রাপ্ত ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তিনি তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং বিদেশী নাগরিক সম্পর্কিত আইন, ১৯৪৬ এর অধীনে ১৯৯২ সালের ২৪ মার্চ গ্রেফতার হন।

বিবাদী তাঁর নাগরিকত্ব পুনর্বহালের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন, যেটিতে তাঁর পক্ষে রায় দেওয়া হয় এবং সরকার উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

ইস্যু :
১. প্রবাসে বসবাসের ফলে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীনে কারও নাগরিকত্ব সম্পর্কে যুক্তিসংগত সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে কি না?
২. নাগরিকত্ব বাতিলের বিজ্ঞপ্তি, প্রাকৃতিক বিচার (Natural Justice)-এর নীতিমালাকে লঙ্ঘন করেছে কি না?

যুক্তিতর্ক :

অধ্যাপক গোলাম আযম যুক্তি উত্থাপন করেন যে, তিনি এবং তাঁর পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। পাকিস্তানে তাঁর অবস্থান ছিল তাঁর রাজনৈতিক দলের কাজের উদ্দেশ্যে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁকে বাধা প্রদান করা হয়। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর, তিনি পাসপোর্টটি জমা দেন এবং তাঁর নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন করেন।

অপরদিকে, জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ বলে, আযমের পাকিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে তিনি বাংলাদেশে তাঁর স্থায়ী বাসস্থান ত্যাগ করেছেন, কারণ উক্ত অবস্থান শিক্ষা বা চাকুরির উদ্দেশ্যে ছিল না। এছাড়াও, রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি দেয় যে, নাগরিকত্ব বাতিলকরণ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে বিবাদীকে কোনো প্রকার সংরক্ষিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় নি, ফলশ্রুতিতে, পূর্ব নোটিশ প্রদান অপ্রয়োজনীয়।

সিদ্ধান্ত :

আপিল বিভাগ রাষ্ট্র পক্ষের আপিল আবেদন খারিজ করে, উল্লিখিত নাগরিকত্ব বাতিলের বিজ্ঞপ্তি ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত ছিল না বলে রায় প্রদান করেন। উপরন্তু, আদালত পর্যাপ্ত প্রমাণ পান যে, বিবাদীর বাংলাদেশে ফিরে আসার যথেষ্ট অভিপ্রায় (animo revertendi) ছিল। আদালত আরও উল্লেখ করেন, বৈধ কারণে বিদেশে বসবাস করা, আদেশের ২ নং অনুচ্ছেদের অধীনে কারও স্থায়ী বাসস্থানের ধারণাকে অস্বীকার করে না। এছাড়া, আদালত এ বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেন যে, একটি পাসপোর্ট তার বাহকের নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ নয় এবং কোনোপ্রকার শুনানি ছাড়াই নাগরিকত্ব বাতিলের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া audi alteram partem (উভয় পক্ষের শুনানির অধিকার) নীতির পরিপন্থি।

আদালত এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন যে, নাগরিকত্ব সংবিধানে স্পষ্টভাবে মৌলিক অধিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলেও এটি অন্যান্য সকল অধিকার অর্জনের ভিত্তিস্বরূপ। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানপন্থী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরাও উল্লিখিত আদেশের ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত যোগ্যতা পূরণ করলে এবং বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধানাবলী) আদেশ, ১৯৭২ এর ২খ(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অযোগ্য বিবেচিত না হলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধানাবলী) আদেশ, ১৯৭২
    • অনুচ্ছেদ : ,
  2. বিদেশী নাগরিক সম্পর্কিত আইন, ১৯৪৬
  3. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share