মারবেরি বনাম ম্যাডিসন (১৮০৩)

Marbury v Madison Case FP BN

মারবেরি বনাম ম্যাডিসন

 সাইটেশন : 5 U.S. 137 (1803)

জুরিসডিকশন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বাদী : মারবেরি
বিবাদী : ম্যাডিসন

পটভূমি :

১৮০০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস তার নিজের উপরাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ান। নির্বাচনী প্রচারণায় উভয় পক্ষই তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা করছিলেন। ৪ বছর আগে, ১৭৯৬ সালের নির্বাচনে, অ্যাডামস স্বল্প ব্যবধানে জেফারসনকে পরাজিত করেছিলেন। তৎকালীন সময়ের নিয়মানুযায়ী, পরাজিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিজয়ী প্রার্থীর উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। তৎকালীন সময়ে, দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতাদর্শিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিচালনা মূলনীতি বিষয়ক তীব্র মতানৈক্য ছিল। একদিকে, অ্যাডামসের ফেডারেলিস্ট পার্টি একটি শক্তিশালী এবং কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থাকে সমর্থন করছিল। অন্যদিকে, জেফারসনের ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকানরা একটি বিকেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থাকে সমর্থন করছিল। ফলশ্রুতিতে, তারা ফেডারলিস্টদের অভিজাত শ্রেণি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক অভিজাত শ্রেণীর সমর্থক হিসাবে বিবেচনা করতো।

ঘটনা :

দল দুটির মাঝে মূল দ্বন্দ্ব শুরু হয় ১৮০০ সালের নির্বাচন শেষে, যখন ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান দলের থমাস জেফারসন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং ফেডারেলিস্ট দলের জন অ্যাডামসকে পরাজিত করেন। অ্যাডামসের রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদের শেষ দিকে, ব্যর্থ ফেডারেলিস্ট পার্টি কংগ্রেসে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে, যার নাম ছিল “দ্য জুডিশিয়ারি অ্যাক্ট, ১৮০১” উক্ত আইনের মাধ্যমে ৬টি সার্কিট কোর্ট এবং ১৬টি নতুন সার্কিট বিচারপতির পদ তৈরি করা হয়। অ্যাডামস উক্ত পদগুলোতে নিজ দলের তথা ফেডারেলিস্ট সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করেন, যাতে বিচার বিভাগে তার দলের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে এবং জেফারসন ও তার ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান দলের আইন প্রণয়নের অভিপ্রায় ব্যাহত করা যায়। থমাস জেফারসন এবং তার ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান দলের সদস্যগণ ১৮০১ সালের মার্চ মাসে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

বিদায়ী রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস তার ক্ষমতার শেষ মুহূর্ত অবধি তার দলীয় লোকদের বিচারপতি পদে নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যার ফলে উক্ত নিয়োগ কার্যক্রমটি ‘মিডনাইট অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করে। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি জন অ্যাডামস, কমিশন জারি করার মাধ্যমে উইলিয়াম মারবেরিকে “জাস্টিস অব দ্য পিস” হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তবে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ম্যাডিসন উক্ত কমিশন প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, উইলিয়াম মারবেরি, সুপ্রিম কোর্টে ম্যাডিসনের বিরুদ্ধে একটি রিট আদেশের (Writ of Mandamus) জন্য আবেদন করেন এবং জানতে চান “কেন তাকে (মারবেরি) কমিশন প্রদান করা হয় নি?”

ইস্যু :
১. মারবেরির কি কমিশন গ্রহণের অধিকার ছিল?
২. যদি থাকে, আর তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে আইন কি তাকে প্রতিকার প্রদান করবে?
৩. যদি প্রতিকার প্রদান করা হয়, সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের Writ of Mandamus ই সঠিক প্রতিকার বলে বিবেচ্য হবে?

সিদ্ধান্ত :

আদালত প্রাথমিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, কমিশন প্রাপ্তির বিষয়ে মারবেরির আইনগত অধিকার ছিল। প্রধান বিচারপতি মার্শাল কারণ উল্লেখপূর্বক বলেন, কমিশনের বিষয়ে যে সকল পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা ছিল তার সবই সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছিল এবং নিয়োগপত্রটি যথাযথভাবে স্বাক্ষরিত ও সিলমোহরযুক্ত ছিল। বিবাদী ম্যাডিসন দাবি করেছিলেন যে, নিয়োগপত্রগুলি যথাযথভাবে বিতরণ করা না হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। আদালত ম্যাডিসনের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে জানান যে, কমিশনের বিতরণ/পৌঁছানো কেবল একটি প্রথা, যা কমিশনের কোন অপরিহার্য উপাদান নয়। প্রধান বিচারপতি মার্শাল পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে বাদীর পক্ষে রায় প্রদান করে বলেন, ❝এই অফিসের আইনি অধিকার [মারবেরির] রয়েছে, যার ফলে তিনি কমিশন পাওয়ার অধিকারী। কমিশন প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানানো তার সেই অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন, যার জন্য দেশের প্রচলিত আইন তাকে প্রতিকার প্রদান করে।❞

এরপর তিনি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি সম্বোধন করেন এবং ঘোষণা করেন, এ ধরনের রিট জারি করার সাংবিধানিক ক্ষমতা আদালতের নেই। যদিও ১৭৮৯ সালের ‘জুডিশিয়ারি অ্যাক্ট’ তখনও কার্যকর ছিল, যা আদালতকে তার মূল এখতিয়ারে ম্যন্ডামাস ক্ষমতা প্রদান করে। তবে, আইনের উক্ত বিধানটি ছিল অসাংবিধানিক। উক্ত আইনের ১৩ অনুচ্ছেদ সংবিধানের অনুচ্ছেদ III, ধারা ২ এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, যেখানে বলা হয়েছে, “সুপ্রিম কোর্টের মূল এখতিয়ার থাকবে” এবং, “আগে উল্লিখিত অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিলের এখতিয়ার থাকবে।” আদালত রায় প্রদান করেন যে, আমেরিকান ফেডারেল আদালতের, সংবিধানের ব্যাখ্যার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এরূপ কংগ্রেসের আইন প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রয়েছে, যা “স্ট্রাইক ডাউন” আইন হিসেবে পরিচিত।

ফলশ্রুতিতে, পরোক্ষভাবে জেফারসন মামলায় তার পক্ষে রায় পান। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৩ -এ, সুপ্রিম কোর্ট মারবেরির বিরুদ্ধে ৪-০ ভোটের সিদ্ধান্ত জারি করেন।

উক্ত ঘটনার মাধ্যমে, প্রধান বিচারপতি মার্শাল ‘জুডিশিয়াল রিভিউ’ (বিচারিক পর্যালোচনা) শব্দটিকে পরিচিতি প্রদান করেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সংবিধান আমেরিকান সরকারের ক্ষমতা উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে এবং সেই সীমাবদ্ধতাগুলো অর্থহীন হবে যদি না সেগুলি বিচারিক পর্যালোচনা এবং প্রয়োগের অধীনে না থাকে। তিনি কংগ্রেসের ক্রিয়াকলাপ পর্যালোচনা করার এবং সেগুলিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বকেও জোর দিয়েছিলেন। যা বিচার বিভাগকে সরকারের একটি স্বাধীন শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্ত প্রদানে সক্ষম হয়েছে।


অনুবাদক :
১. রুদ্র জয়া
২. মোহাম্মদ হান্নান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share