আতাউল গণি শেখ ও অন্যান্য বনাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও অন্যান্য
সাইটেশন : 60 DLR (HCD) 79
জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ
আবেদনকারী : আতাউল গণি শেখ ও অন্যান্য
বিবাদী : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও অন্যান্য
ঘটনা :
আবেদনকারীগণ (রিট দায়ের কারীগণ) ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অধীনে ঘোষিত আটাত্তর (৭৮) জনের এমএলএসএস (MLSS) পদে নিয়োগপত্র না পাওয়ায় সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। তাদের দাবি ছিল, তারা যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলের তালিকায় তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে, পূর্বে ঘোষিত ফলাফলটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল না করেই ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল একটি নতুন ফলাফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে তাদের নাম বাদ দিয়ে পূর্বে অকৃতকার্য হওয়া ২২ জন প্রার্থীকে বেআইনিভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে দৈনিক সমকাল ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
ইস্যু :
১. ১৭.০৪.২০১৪ তারিখে প্রকাশিত কারসাজি করা ফলাফলের তালিকা থেকে আবেদনকারীদের নাম বাদ দেওয়া আইনসংগত ও যৌক্তিক ছিল কি না।
২. ০৮.০১.২০১৪ তারিখে প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের নিয়োগ পাওয়ার বৈধ প্রত্যাশা ছিল কি না।
৩. আবেদনকারীদের নিয়োগপত্র না দেওয়া ন্যায়বিচারের নীতি এবং সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে কি না।
যুক্তিতর্ক :
আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি :
আবেদনকারীগণের পক্ষের আইনজীবী জনাব মো. সাইদুল আলম খান যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, আবেদনকারীগণ আইনসম্মতভাবে নির্বাচিত হয়ে ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত কারসাজি করা প্যানেল থেকে কোনো আইনগত ভিত্তি বা ব্যাখ্যা ছাড়াই অন্যায়ভাবে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এরূপ কার্যকলাপ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করেছে এবং এটি একটি দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। বৈধ প্রত্যাশার নীতির (doctrine of legitimate expectation) উল্লেখ করে, তিনি দাবি করেন, আবেদনকারীদের নিয়োগের বৈধ প্রত্যাশা ছিল এবং তার যুক্তি সমর্থনে তিনি বাংলাদেশ বিমান কর্পোরেশন বনাম রাবিয়া বাশরী ইরিন ও অন্যান্য [8 MLR (AD) 223] সহ প্রাসঙ্গিক মামলার নজির উল্লেখ করেন।
বিবাদী (রাষ্ট্র) পক্ষের যুক্তি:
বাদীপক্ষ যুক্তি দেন যে, ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারির ফলাফলের তালিকায় কিছু ত্রুটি থাকায় রেলওয়ের উচ্চ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত তালিকাকে কখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাই মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল একটি নতুন প্যানেল আইনানুযী প্রকাশ করা হয়। তারা দাবি করেন, যেহেতু পূর্বের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়নি, সেহেতু তা আলাদাভাবে বাতিল করার প্রয়োজন ছিল না এবং এ কারণে আইনের কোনো প্রকার ব্যতয়ও ঘটেনি। বাদী পক্ষের আইনজীবী, জনাব শহিদ আলম এই যুক্তিকে সমর্থন করে প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা (পূর্ব), বাংলাদেশ রেলওয়ে বনাম মুহাম্মদ শামসুর রহমান মামলার অপ্রকাশিত রায়ের উদ্ধৃতি দেন।
সিদ্ধান্ত :
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, আবেদনকারীগণ ন্যায্য আচরণ এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আদালত মনে করেন যে, বৈধ প্রত্যাশার নীতি এখানে প্রযোজ্য, কারণ আবেদনকারীগণ মৌখিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং ৮ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখের অনুমোদিত ফলাফলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরে ১৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখের ফলাফলের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া আইনি ভিত্তিহীন ছিল এবং উক্ত কার্যকলাপ জনস্বার্থেও ছিল না।
আদালত এ বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, একই প্যানেল থেকে অন্যদের নিয়োগ দেওয়া হলেও আবেদনকারীদের বাদ দেওয়া বৈষম্যের শামিল, যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আবেদনকারীদের কোনো দোষ বা ত্রুটির বৈধ ব্যাখ্যা কিংবা প্রমাণের অনুপস্থিতি আদালতকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে যে, প্রক্রিয়াটি দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল এবং যা সম্পূর্ণ অন্যায্য ছিল।
ফলশ্রুতিতে, আদালত আবেদনকারীদের সংরক্ষিত শূন্য এমএলএসএস পদে ষাট দিনের মধ্যে নিয়োগ প্রদান করে আংশিকভাবে রুলটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট আইনি নীতি :
বৈধ প্রত্যাশার নীতি: বৈধ প্রত্যাশার নীতি প্রশাসনিক আইনের একটি নীতি, যা ব্যক্তি বিশেষকে হঠাৎ বা অন্যায়ভাবে সরকারি নীতি বা সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, বিশেষ করে যখন তারা পূর্বের কর্মকাণ্ড, প্রতিশ্রুতি বা সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠিত চর্চার উপর ভিত্তি করে কোনো নির্দিষ্ট আচরণের প্রত্যাশা করে থাকেন। তবে কিছুক্ষেত্রে বৈধ প্রত্যাশা কেবল বৈধ জনস্বার্থের কারণে অগ্রাহ্য করা যেতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে বৈধ কারণ বা জনস্বার্থের ভিত্তি দেখিয়ে বৈধ প্রত্যাশা নাকচ করার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
- অনুচ্ছেদ : ২৭ এবং ১০২
অনুবাদক :
১ . মো. আতিকুর রহমান
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ