ক্যাপারো বনাম ডিকম্যান (১৯৯০)

Caparo v Dickman Case Feature Photo BN

ক্যাপারো ইন্ডাস্ট্রিস পিএলসি. বনাম ডিকম্যান এবং অন্যান্য

রেফারেন্স : [1990] 1 All ER 568

জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড

বাদী : ক্যাপারো ইন্ডাস্ট্রিস পিএলসি.
বিবাদী : ডিকম্যান

ঘটনা :

১৯৮৪ সালের ২২শে মার্চ, ফিডালিটি পিএলসি. নামক একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের বিগত অর্থবছরের (মার্চ ৩১, ১৯৮৪ পর্যন্ত) আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে। উক্ত বিবরণী প্রস্তুত করেছিলেন জনাব ডিকম্যান নামক একজন বিখ্যাত চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট। বিবরণীতে উল্লেখ করা হয় বিগত অর্থবছরে ফিডালিটি কোম্পানি সর্বমোট ১৩ লক্ষ পাউন্ড মুনাফা অর্জন করেছে, আদতে তথ্যটি ছিল ভুল। বরং ফিডালিটি কোম্পানি বিগত অর্থবছরে প্রায় ৪ লক্ষ পাউন্ড লোকসান করেছিলো।

কোম্পানির লাভজনকতার তথ্য দেখে, ক্যাপারো ইন্ডাস্ট্রিস পিএলসি. নামক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জুন ৮, ১৯৮৪ থেকে জুন ১২, ১৯৮৪ মধ্যবর্তী সময়ে শেয়ার বাজার হতে ফিডালিটি কোম্পানির প্রায় ১,৫০,০০০ শেয়ার ক্রয় করে। যা ফিডালিটি কোম্পানির মোট শেয়ারের ২৯.৯ শতাংশ। ইতোমধ্যে ফিডালিটি কোম্পানির আর্থিক অসংগতি প্রকাশ পায় এবং শেয়ারের দরপতন ঘটে। ফলে, ক্যাপারো কর্তৃপক্ষ ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আর্থিক বিবরণীতে ভুল তথ্য থাকা এবং কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য জানার পর ক্যাপারো কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা, আর্থিক বিবরণী তৈরিতে জনাব ডিকম্যানের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে এবং এর ফলে সংঘটিত আর্থিক ক্ষতির ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে মামলা দায়ের করে।

ইস্যু :
বাদী, ক্যাপারোর প্রতি কি অডিটর ডিকম্যানের কোন প্রকার দায়বদ্ধতা ছিল?

সিদ্ধান্ত :

হাইকোর্টে মামলাটির প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কোর্টের বিচারক বলেন, ক্যাপারো ইন্ডাস্ট্রিস পিএলসি’র প্রতি অডিটর জনাব ডিকম্যানের কোন প্রকার দায়বদ্ধতা ছিল না। কারণ, আর্থিক বিবরণীটি প্রস্তুত করা হয়েছিলো ফিডালিটি কোম্পানিতে স্থায়ী অংশীদারিত্ব থাকা ব্যক্তিবর্গের জন্য। কোন বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী বা একক বিনিয়োগকারীর শেয়ার ক্রয় বিষয়ক তথ্য সরবরাহের লক্ষ্যে বিবরণীটি তৈরি করা হয় নি।

হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ক্যাপারো আপিল আদালতে আপিল করলে, আদালত প্রাথমিকভাবে রায়টি বাতিল করে দিলেও পরবর্তীতে হাউজ অব লর্ডস প্রথম রায়টিই বহাল রাখে। অর্থাৎ, উক্ত ঘটনায় পেশাদার বিনিয়োগকারীদের প্রতি অডিটরের কোনো প্রকার দায়বদ্ধতা ছিল না, বলে জানায়। আদালত বলেন, সামষ্টিকভাবে কোম্পানির প্রতি অডিটরের দায়বদ্ধতা ছিল তবে বহিরাগত কোন সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগকারীর প্রতি কোন প্রকার দায়বদ্ধতা ছিল না। উক্ত রায়ের মাধ্যমে ❝ক্যাপারো টেস্ট❞ নামক একটি পরীক্ষার পরিচিতি ঘটে। এটি ❝থ্রি পার্ট টেস্ট❞ নামেও পরিচিত। এখানে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ‘অবহেলা জনিত’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করতে হলে অবশ্যই তিনটি বিষয় প্রমাণ করতে হবে। এগুলো হলো :

  1. পূর্বানুমান : অবহেলা জনিত কারণে ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়টি পূর্ব হতে অনুমান যোগ্য হতে হবে।
  2. মধ্যবর্তী সম্পর্ক : অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর মধ্যে সম্পর্ক থাকতে হবে।
  3. ন্যায্যতা : দায়িত্ব অর্পণের বিষয়টি অবশ্যই যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিসংগতহতে হবে।

আদালত জানান, উক্ত মামলাটিতে দায়িত্ব অর্পণের বিষয়ে উল্লিখিত মানদণ্ড পূরণ হয় নি, বিশেষ করে ❝মধ্যবর্তী সম্পর্ক❞ ও ❝ন্যায্যতা❞ – এর বিষয় দুটি। কারণ, ডিকম্যান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আর্থিক বিবরণীটি শুধু মাত্র ফিডালিটি কোম্পানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিলো, কোন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য প্রদানের লক্ষ্যে নয়। উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনাপূর্বক, আদালত বিবাদীকে নির্দোষ বলে রায় প্রদান করেন।


অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share