কুইন-এমপ্রেস বনাম আবদুল্লাহ
সাইটেশন : (1885) IL Ru 7ALL385
জুরিসডিকশন : বৃটিশ ভারত (বর্তমান ভারত)
আপিলকারী : কুইন-এমপ্রেস (রাষ্ট্র)
বিবাদী : আবদুল্লাহ
ঘটনা :
ঘটনার দিন সকালে, দুলারি নামক এক যৌনকর্মীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁর শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি সম্পূর্ণ কেটে গিয়েছিলো, যার ফলে, তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তবুও কিছু সময়ের জন্য তিনি সচেতন ছিলেন। এমতাবস্থায়, প্রথমে তাকে থানায়, এবং পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য একটি ডিসপেনসারিতে (চিকিৎসালয়) নেওয়া হয়।
ময়নাতদন্তে তার গলায় গভীর ও প্রাণঘাতী আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়, যা সহিংস আক্রমণের প্রমাণ দেয়।
থানায় দুলারিকে প্রথমে তার মা জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং সেই সময় পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কথা বলতে না পারায় পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদ ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে করা হয়। একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং একজন সহকারী সার্জন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। ম্যাজিস্ট্রেট মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করেন, যেখানে তিনি দুলারির হাতের ইশারা এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দেয়া বক্তব্য নথিভুক্ত করেন। দুলারীর শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেট একে একে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম বলেন এবং দুলারি হাতের ইঙ্গিতের মাধ্যমে “হ্যাঁ” বা “না” জবাব দিচ্ছিলেন। “আবদুল্লাহ” নামের বিষয়ে যখন প্রশ্ন করা হয়, দুলারি স্পষ্ট “হ্যাঁ” ইঙ্গিত দেন, যা আক্রমণকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে। অস্ত্র সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ছুরি বা তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ হওয়া অস্বীকার করেন, তবে রেজার (ক্ষুর) দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়ে “হ্যাঁ” ইঙ্গিত দেন। ম্যাজিস্ট্রেট এই অঙ্গভঙ্গিগুলো যথাযথভাবে নথিভুক্ত করেন এবং তা মৃত্যুকালীন জবানবন্দির অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যদিও এটি মৌখিক বক্তব্য ছিল না, তবুও দুলারীর ধারাবাহিক, স্পষ্ট এবং সচেতন অঙ্গভঙ্গি আক্রমণকারী এবং ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে।
ইস্যু :
১. ইঙ্গিত বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রদত্ত উত্তরগুলি কি সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩২(১) অনুসারে “মৃত্যুকালীন জবানবন্দি” হিসাবে গ্রহণযোগ্য?
২. ঐ অঙ্গভঙ্গিগুলো কি ধারা ৮ অনুসারে “আচরণ” (conduct) হিসাবে বিবেচিত হতে পারে?
সিদ্ধান্ত :
প্রধান বিচারপতি ডব্লিউ. কোমার পেথারম্যান এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করেন যে, কোনো প্রশ্নের উত্তরে হাত নাড়ানোর মতো অঙ্গভঙ্গি, ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের ধারা ৮ অনুসারে “আচরণ” হিসাবে গৃহীত হতে পারে কি না। তিনি বলেন, ধারা ৮ অনুসারে, কোনো আচরণ তখনই প্রাসঙ্গিক হয় যখন তা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রভাব ফেলে বা প্রভাবিত হয়। এখানে দুলারীর হাতের অঙ্গভঙ্গি সরাসরি গলা কাটা ঘটনার সাথে সম্পর্কিত ছিল না, বরং বাহ্যিক প্রশ্নের উত্তরে প্রদর্শিত হয়েছিলো। সুতরাং, একে ধারা ৮ অনুসারে “conduct” বলা যায় না।
এছাড়াও, হাতের অঙ্গভঙ্গি ধারা ৩২ অনুসারে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণযোগ্য কি না, এ বিষয়েও তিনি বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ধারা ৩২ অনুসারে মৃত্যুর পূর্বে দেওয়া যেকোনো বিবৃতি, তা লিখিত বা মৌখিক হোক না কেনো, প্রাসঙ্গিক হলেই তা গ্রহণযোগ্য। ‘মৌখিক’ শব্দটির বিস্তৃত ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যদি মৃত্যুপথযাত্রী শুধু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কথার সাথে অঙ্গভঙ্গি (যেমন: মাথা নাড়ানো বা হাত দেখানো) দিয়ে সম্মতি জানায়, তাও মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে গণ্য হতে পারে। ফলে, হাতের অঙ্গভঙ্গি ধারা ৮ অনুসারে আচরণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য না হলেও, ধারা ৩২ অনুসারে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
উক্ত রায়ে, অঙ্গভঙ্গিকে মৌখিক প্রমাণের একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (ভারত)
- ধারা : ৩, ৮, ৩২(১)
অনুবাদক :
১. ফাহিম আহমেদ
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ