খসরু বনাম রাষ্ট্র (১৯৮৩)

খসরু বনাম রাষ্ট্র (১৯৮৩)

খসরু বনাম রাষ্ট্র

সাইটেশন : 35 DLR 119

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী: খসরু (নিম্ন আদালতে বিবাদীপক্ষ)
বিবাদী: রাষ্ট্র (নিম্ন আদালতে বাদীপক্ষ)

ঘটনা :

হত্যাকাণ্ডের রাতের ঘটনা:
নাতুব আলী তার স্ত্রী কমলা খাতুন এবং তার মা সোনাজানের সাথে বসবাস করতেন। ঘটনার রাতে নাতুব আলী ও তার স্ত্রী কমলা খাতুন গবাদিপশু পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের কুঁড়েঘরের পরিবর্তে রান্নাঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। কমলা খাতুনের প্রাথমিক বর্ণনা অনুযায়ী, মধ্যরাতে খসরু সহ ২-৩ জন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে এবং নাতুব আলীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। তিনি দাবি করেন, খসরু তাকে চুপ করে থাকার জন্য হুমকি দেয়। তবে, বিচার চলাকালে তিনি তার পূর্বের বক্তব্য প্রত্যাহার করে বলেন, তিনি ঘটনার রাতে কাউকেই চিনতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করেন যে, পুলিশ তার আগের জবানবন্দিটি দিতে তাকে জোর করেছিল। সোনাজান সাক্ষ্য দেন যে, কমলা খাতুনের সঙ্গে অভিযুক্ত খসরু ওরফে খোরশেদ আলীর অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। হত্যার আগে নাতুব আলী খসরুকে সতর্ক করে তার স্ত্রী থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন, যা হত্যার পেছনে একটি শক্তিশালী উদ্দেশ্য হিসেবে ভূমিকা রাখে।

হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার:
পরবর্তীতে তদন্তের সময় খসরু পুলিশকে নাতুব আলীর বাড়িতে লুকানো একটি ছুরি (প্রদর্শনী-১) দেখিয়ে দেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয় যে, নাতুব আলী ধারালো অস্ত্র দ্বারা সৃষ্ট একাধিক ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিলেন, যা উদ্ধারকৃত ছুরির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

প্রত্যক্ষ প্রমাণের অনুপস্থিতি:
হত্যার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। নাতুব আলীর ভাই বাদশা মিয়া কর্তৃক দায়ের করা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (FIR)-এ শুরুতে কোনো অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ইস্যু :
১. অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর স্ত্রীর কথিত অনৈতিক সম্পর্ক এবং পূর্ববর্তী শত্রুতা হত্যার জন্য একটি শক্তিশালী উদ্দেশ্য প্রমাণ করতে সক্ষম ছিল কি না?
২. অভিযুক্তের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছুরি উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি, প্রধান সাক্ষীদের আচরণবিধির সমন্বয়ে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ধারাবাহিকতা সম্পূর্ণ করেছে কিনা?

সিদ্ধান্ত :

আদালত ছুরিটি লুকিয়ে রাখা এবং এরপর সেটির উদ্ধারকে অত্যন্ত অপরাধমূলক বলে মনে করেছিলেন, বিশেষ করে, যেহেতু খশরু ব্যাখ্যা করতে পারেননি যে তিনি কীভাবে এটির অবস্থান জানতেন। মামলাটি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ সম্পর্ক এবং পূর্ব শত্রুতার কারণে সৃষ্ট অভিপ্রায়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। এছাড়াও, ছুরি উদ্ধার হওয়া এবং কমলা খাতুনের সন্দেহজনক আচরণ একে আরও মজবুত করে। হাইকোর্ট ৩০২ ধারার অধীনে খসরুর দোষী সাব্যস্ততা বহাল রেখে রায় দেন যে, পারিপার্শ্বিক প্রমাণের শৃঙ্খলটি সম্পূর্ণ, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং চূড়ান্ত ছিল। আদালত তিনটি মূল নীতির উপর জোর দেন:

 (১) পারিপার্শ্বিক প্রমাণ সমস্ত যুক্তিসংগত সন্দেহকে বাদ দিয়ে অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ, অখণ্ড ধারাবাহিকতা গঠন করবে, যা মো. লোকমান বনাম রাষ্ট্র মামলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। 
(২) বিচ্ছিন্ন সন্দেহজনক ঘটনাগুলোর জন্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থন প্রয়োজন, যা উদ্দেশ্য, গোপনকরণ ও উদ্ধারের সম্মিলিত প্রমাণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
(৩) দোষী সাব্যস্ত করার জন্য আইনসম্মত প্রমাণ প্রয়োজন, নৈতিক অনুমান নয়; যা আলকাস মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । অর্থাৎ, রায় অবশ্যই প্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে, কল্পনা বা অনুমানের ভিত্তিতে নয়।

এই সুরক্ষা ব্যবস্থা গুলো খসরুর দণ্ডাদেশ বহাল রাখে এবং একই সাথে ভুল সিদ্ধান্ত থেকে অভিযুক্তকে রক্ষা করে। ঘটনাপ্রবাহ, অপরাধের উদ্দেশ্য, সাক্ষীদের আচরণ এবং ছুরিটির উদ্ধার হওয়া কোন যুক্তিসংগত সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। এই মামলাটি বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ মূল্যায়নের জন্য একটি মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৩০২
  2. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
    • ধারা : , ২৭

অনুবাদক :
. মো. আতিকুর রহমান
২. রাইয়ান তালুকদার

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ


Cite this Page:

OSCOLA

APA

Bluebook

Share