হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বনাম রাষ্ট্র এবং অন্যান্য
সাইটেশন : 53 DLR (2001) 102
জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ
আপিলকারী : হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ (নিম্ন আদালতে বিবাদী)
বিবাদী : রাষ্ট্র এবং অন্যান্য (নিম্ন আদালতে বাদী)
ঘটনা :
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, ঢাকার কাওরান বাজারের মূল্যবান জমিগুলো একটি জটিল আইনি বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ. এম. এরশাদ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি তাঁর পদমর্যাদার অপব্যবহার করে তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদের জন্য উক্ত জমিগুলো দখল করেন, এবং এ কাজে রওশন এরশাদ তাঁর প্রকৃত পরিচয় ও ঢাকার ঠিকানা গোপন রাখেন। সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি একদল ব্যক্তির, অভিযোগ অনুযায়ী, আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে মূল মালিক বা তাঁদের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে ছোট ছোট জমির টুকরা ক্রয় করেন, যাতে তাঁদের দাবিগুলো বৈধ বলে প্রতীয়মান হয়। রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এম. এম. রহমাতুল্লাহ নিয়ম ও প্রতিবেদন উপেক্ষা করে দ্রুত অনুমোদন ও হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে, অভিযুক্তদের সাথে সংশ্লিষ্ট ‘জনতা পাবলিশিং লিমিটেড’, বহুতল জনতা টাওয়ার নির্মাণ শুরু করে, যা অস্বাভাবিক পরিমাণ নগদ অর্থের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছিল। এসব কার্যকলাপের ফলে রাজউক পাঁচ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং এর মাধ্যমে দেশের অন্যতম আলোচিত দুর্নীতি মামলার সূচনা ঘটে।
ইস্যু :
১. এইচ. এম. এরশাদ, এম. এম. রাহমাতুল্লাহ এবং অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ কি তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের ও তাঁদের সহযোগীদের জন্য অবৈধভাবে ভূমি ও আর্থিক সুবিধা অর্জন করেছিলেন?
২. জনতা টাওয়ার নির্মাণে ব্যয়িত অর্থ অভিযুক্তদের আয়ের সীমা অতিক্রম করেছে, এই অভিযোগ বাদীপক্ষ সন্তোষজনকভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে কিনা?
৩. অপরাধের মাত্রা এবং রাজউকের প্রতি সৃষ্ট বৃহৎ ক্ষতি বিবেচনা করে প্রদত্ত কারাদণ্ডগুলো ন্যায়সংগত ও যথাযথ ছিল কিনা?
যুক্তিতর্ক :
আপিলকারী পক্ষের যুক্তি:
আপিলকারীগণ দাবি করেন যে, তাদের অনেককেই অভিযোগকৃত দুর্নীতির ঘটনায় প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও অন্যায়ভাবে মামলায় জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তারা দাবি করেন যে, তাদের অন্তর্ভুক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল বা শুধু সম্পর্কের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। তারা বিবাদীপক্ষের উপস্থাপিত প্রমাণের যথেষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং যুক্তি দেন যে, উক্ত প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ। আপিলকারীগণ আরও যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, সব আসামির উপর সমানভাবে সাত বছরের কারাদণ্ড আরোপ করা ন্যায়সংগত নয়, বিশেষত যে-সব আসামির ভূমিকা ছিল সামান্য, তাদের ক্ষেত্রে এই দণ্ড উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যেমন এইচ. এম. এরশাদের তুলনায় অতিরিক্ত কঠোর। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, বেসরকারি ব্যক্তিদেরকে সরকারি কর্মকর্তাদের সমান মানদণ্ডে বিচার করা যায় না এবং প্রতিটি আসামির স্বতন্ত্র ভূমিকা যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি, যা ন্যায়বিচার ও সুবিচারের মূলনীতি ক্ষুণ্ন করেছে।
বিবাদীপক্ষের যুক্তি:
বিবাদীপক্ষ জোর দিয়ে বলেন যে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের অসদাচরণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে। তারা এমন প্রমাণ উপস্থাপন করেন যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এইচ. এম. এরশাদই ভূমি বরাদ্দ পরিকল্পনাটি পরিচালনা করেছিলেন এবং অন্যান্য আসামিরা জেনেশুনেই এতে সহায়তা করেছিলেন, যার ফলে রাজউক (RAJUK) এর উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিবাদীপক্ষ যুক্তি দেন যে, দণ্ড প্রদান কেবল দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, ভবিষ্যতে অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধ করার জন্যও প্রয়োজন, সেইসাথে ন্যায়পরায়ণতা বজায় রেখে সমাজকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, সমস্ত আসামি, প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে হোক, অপরাধের জন্য দায়ী এবং তাদেরকে দায়ী সাব্যস্ত করা ন্যায়বিচার রক্ষা ও জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।
সিদ্ধান্ত :
আদালত সব আপিলকারীর সাজা বজায় রাখেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, ষড়যন্ত্র এবং রাজউকের আর্থিক ক্ষতির বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন। আদালত জোর এ বিষয়ে দেন যে, শাস্তি অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে, দুর্নীতি হালকা মনে করানোর জন্য দণ্ডে সহনশীল নয়, এবং বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার জন্য অত্যধিক কঠোরও নয়। মূল সিদ্ধান্তসমূহ :
- এইচ. এম. এরশাদ: সাজা হ্রাস করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫,৪৮,৭০,৮০০.০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের অতিরিক্ত কারাদণ্ড।
- অন্যান্য আপিলকারী: সাত বছরের সাজা হ্রাস করে প্রত্যেকের জন্য ১০,০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড।
- অধিগ্রহণ: প্লট নং ৪৯, ৪৯ক, ৪৯খ এবং ৪৯গ, যার মধ্যে জনতা টাওয়ারও রয়েছে, রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে অপরিবর্তিত থাকে।
আদালত দায়বদ্ধতা ও ন্যায়সংগত শাস্তির মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করেন, এবং প্রতিটি আপিলকারীর ভূমিকা এবং অপরাধের গুরুতরতার অনুপাতে শাস্তি নির্ধারণ করেন।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- দণ্ডবিধি, ১৮৬০
- ধারা : ৭১, ৭২
- ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
- ধারা : ৪২৩(১)(খ))
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
- অনুচ্ছেদ : ৪২, ৫৫(৩)
অনুবাদক :
১. সারাফ আল সাকিফ
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ