কামাল ওরফে এক্সল কামাল বনাম রাষ্ট্র (২০১৭)

Exol Kamal v State Case FP BN

কামাল ওরফে এক্সল কামাল বনাম রাষ্ট্র

রেফারেন্স : 10 SCOB [2018] AD

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী : কামাল ওরফে এক্সল কামাল (বিবাদী, নিম্ন আদালতে)
বিবাদী : রাষ্ট্র (বাদী, নিম্ন আদালতে)

ঘটনা :

২০০৪ সালের ২রা মার্চ, আনুমানিক রাত ৮:০০ টায় স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য, ভুক্তভোগী গিয়াসউদ্দীন বাড়ি ফেরার সময় অভিযুক্ত ইব্রাহিম ওরফে ইবু এবং আপলিকারী কামাল ওরফে এক্সল কামালের দ্বারা মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হন। মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি জরুরি আলোচনার কথা বলে গিয়াসউদ্দিনকে বাড়ির বাহিরে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় এসে মূল অভিযুক্তের সাথে বাকি অভিযুক্তরাও গিয়াসউদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। হামলার পর আহত গিয়াসউদ্দিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গিয়াসউদ্দিন কর্তৃক অভিযুক্তদের বেআইনি কাজে বাধা দেয়ার ফলে সৃষ্ট ব্যক্তিগত আক্রোশকে হত্যার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে সন্দেহ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভুক্তভোগীর আত্মীয়দের মধ্যে কয়েকজন বৈদ্যুতিক বাতির আলোতে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পেরেছিল। সে মোতাবেক, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৪ এবং ৩০২ এর অধীনে প্রধান অভিযুক্ত ইব্রাহিম ওরফে ইবু, আপিলকারী কামাল ওরফে এক্সল কামালসহ আরও আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। দায়রা আদালত আপিলকারী এবং আরও দুই জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন একইসাথে, ৫০,০০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ১ (এক) বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। অপর চারজনকে খালাস দেওয়া হয় এবং একজন বিচার চলাকালীন সময় মৃত্যুবরণ করেন।

হাইকোর্ট বিভাগ বিচারিক আদালতের ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কামাল ওরফে এক্সল কামাল উক্ত রায়ের বিপক্ষে আপিল আবেদন করেন।

ইস্যু :
১. উত্থাপিত প্রমাণাদির ভিত্তিতে দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ অনুযায়ী আপিলকারীকে কি হত্যা মামলায় যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল?
২. আপিলকারীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তর করা উচিত?

যুক্তিতর্ক :

আপিলকারীর আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, আপিলকারী (এক্সল কামাল) কে দোষী সাব্যস্ত করা এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা ন্যায়সংগত ছিল না। তিনি দাবি করেন যে, আপিলকারী, কামাল ওরফে এক্সল কামাল, নির্দোষ এবং পূর্ব শত্রুতার কারণে মিথ্যা অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি সাক্ষীদের বক্তব্যে, বিশেষত ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে অসংগতি তুলে ধরেন। অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন যে, আপিলকারী পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ প্রদত্ত প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
কর্তব্যরত চিকিৎসক এটি নিশ্চিত করতে পারেননি যে, ভুক্তভোগীর দেহের আঘাতগুলি পিস্তলের গুলির ফলে সৃষ্টি হয়েছিল নাকি রিভলবারের গুলির ফলে, যা উক্ত বিষয়ে একটি সন্দেহের সৃষ্টি করে। অভিযুক্ত আপিলকারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের অধীনে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি এবং উল্লিখিত পিস্তলও উদ্ধার করা হয়নি, যা প্রমাণ করে যে পূর্ব শত্রুতার কারণে আপিলকারীকে অন্যায়ভাবে ঘটনার সাথে জড়িত করা হয়েছে। আরো যুক্তি উত্থাপন করা হয় যে, স্বাধীন সাক্ষীদের যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। ময়নাতদন্তের সময় পরিবারের সদস্যরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলো এবং কেউই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করার কথা যথাযথভাবে উল্লেখ করেননি। এছাড়াও, আপিলকারীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।

বিবাদীপক্ষ উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি অভিযুক্তদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলেন এবং সালিশে (অনানুষ্ঠানিক সালিশ) তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন, যা অভিযুক্তদের ক্ষুব্ধ করেছিল। এই কারণেই, ভুক্তভোগীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, কারণ তিনি আপিলকারীর অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিহত করেছিলেন।

সিদ্ধান্ত :

আপিল বিভাগ গিয়াসউদ্দিনের হত্যাকান্ডকে একটি নির্মম, পূর্বপরিকল্পিত এবং ইচ্ছাকৃত অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আপিলকারীর দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন। আদালত উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগীকে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনার পর, আপিলকারী তাকে নিকট দূরত্ব থেকে একাধিকবার গুলি করেন, এ বিষয়ে দেয়া, স্বাধীন এবং পরিবারের সাক্ষীদের দেওয়া সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য ছিল। আদালত আরও জানান যে, উত্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণে কোনো উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি ছিল না।

হত্যার উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল, কারণ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল। যেহেতু পিস্তল এবং রিভলভার উভয়ই গুলির আঘাতের কারণ হতে পারে, তাই অস্ত্রের ধরন সম্পর্কে অভিযুক্তের দাবি অপ্রাসঙ্গিক। মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর বিষয়ে, আদালত অপরাধটিকে নিষ্ঠুর ও পরিকল্পিত বলে রায় দেয়। অভিযুক্তের অপরাধমূলক কার্যক্রম তাকে সমাজের জন্য অব্যাহত হুমকি হিসেবে প্রমাণ করে। এছাড়াও বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডকে অসাংবিধানিক বলে বিবেচনা করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গ্রেগ বনাম জর্জিয়া (১৯৭৫), 428 U.S. 153 মামলায় রায় দিয়েছিলেন যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড সর্বদা অনুপযুক্ত নয় বরং এটি সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের জন্য উপযুক্ত হতে পারে যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় তা অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশের মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইনের এই নীতিটি সমর্থন করা হয়েছে।

ফলশ্রুতিতে, আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করে আপিল আবেদন ও জেল আবেদন খারিজ করে দেন।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৩৪, ৩০২
  2. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
    • ধারা : ৩৪২

অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ


Cite this Page:

OSCOLA

APA

Bluebook

Share