মিসেস অরুণা সেন বনাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য
সাইটেশন : 27 DLR (HCD) 122
জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ
আবেদনকারী : মিসেস অরুণা সেন
বিবাদী : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য
ঘটনা :
চঞ্চল সেনকে ১৯৭৪ সালের ১৭ই এপ্রিল ঢাকায় তার বাসভবন থেকে কোনো প্রকার গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই কয়েকজন পুলিশ সাদা পোশাকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারটি ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৭ এর ধারা ৫৪ এর অধীনে করা হয়েছিল, যা একটি আমলযোগ্য অপরাধের সন্দেহে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়। গ্রেফতারের পর চঞ্চলকে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। গ্রেফতারের পর, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৬৭ ধারায় বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাকে রিমান্ডে পাঠানো হয়। অবশেষে, ১৯৭৪ সালের ২২শে এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ -এর ৩(১) ধারার অধীনে একটি আটকাদেশ জারি করে। সরকার অভিযোগ আনে যে, তিনি (চঞ্চল সেন) একটি গোপন সংগঠনের সক্রিয় সদস্য, যার উদ্দেশ্য ছিল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দুর্বল করা, এছাড়াও তিনি অবৈধভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখা, নাশকতাকারীদের আশ্রয় দেওয়া এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এই অভিযোগগুলিই নির্বাহী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার আটকাদেশের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চঞ্চল সেনের মা, অরুণা সেন, সংবিধানের ১০২(২)(খ)(i) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি ‘হেবিয়াস কর্পাস’ রিট পিটিশন দায়ের করেন, যাতে তিনি আদালতকে আটকাদেশটি অবৈধ ঘোষণা করতে এবং চঞ্চলকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেন। তিনি আরও দাবি করেন যে, গ্রেফতারটি আইনসম্মত ভিত্তি ছাড়া এবং সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রদত্ত সাংবিধানিক সুরক্ষার লঙ্ঘন করে স্বেচ্ছাচারীভাবে করা হয়েছিল ।
ইস্যু :
১. আটকাদেশটি বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট কারণের উপর ভিত্তি করে ছিল কি না। (বস্তুনিষ্ঠ সন্তুষ্টি)
২. সংবিধানের ১০২(২)(খ)(i) অনুচ্ছেদের অধীনে হাই কোর্টের কি প্রতিরোধমূলক আটকাদেশ পর্যালোচনার ক্ষমতা আছে।
যুক্তিতর্ক :
আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি :
আবেদনকারী যুক্তি দেন যে, চঞ্চল সেনের গ্রেপ্তার কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই এবং কোনো প্রকার কারণ না জানিয়েই করা হয়েছিল, যা সংবিধানের ৩৩(১) থেকে ৩৩(৩) অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করে। অধিকন্তু, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর অধীনে আটকের আদেশটি কেবল হেফাজতে থাকা অবস্থায় অবৈধ গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের পরে জারি করা হয়েছিল। অন্যদিকে, প্রশাসন কর্তৃক গ্রেপ্তারের জন্য প্রদত্ত কারণগুলি অস্পষ্ট এবং অতি সাধারণ প্রকৃতির ছিল। একইসাথে, সেগুলি সমর্থন করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ বা দলিল ছিল না। এছাড়াও, প্রশাসনের সন্তুষ্টির বস্তুনিষ্ঠতার পক্ষেও আবেদনকারী যুক্তি দিয়েছিলেন। সর্বোপরি, আটকের বিষয়টি সংবিধানের ২৬, ৩২, ৩৩ এবং ৩৬ অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবেও চ্যালেঞ্জ করা হয়।
বিবাদী (রাষ্ট্র) পক্ষের যুক্তি:
বিবাদীপক্ষ যুক্তি দেন যে আটকাদেশটি বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর অধীনে বৈধ ছিল, কারণ এটি আইনের ধারা ৩(১) এর অধীনে জারি করা হয়েছিল। এই ধারা অনুযায়ী আটক ব্যক্তি জনশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন কিনা এবং জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সরল বিশ্বাসে আটকটি করা হয়েছিল কিনা তা প্রশাসনের সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে। উপরন্তু, নির্বাহী বিভাগের সন্তুষ্টি বিচারিক পর্যালোচনার বিষয় নয়।
সিদ্ধান্ত :
হাইকোর্ট বিভাগ রায় দেন যে, চঞ্চল সেনের আটকটি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই করা হয়েছিল, যা বেআইনি । অতএব, হেবিয়াস কর্পাসের একটি রিট জারি করা হয়, এবং সরকারকে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অধিকন্তু, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ধারা ৩(১) এর অধীনে আটক কর্তৃপক্ষের “সন্তুষ্টি” অবশ্যই প্রকৃত, যুক্তিসংগত এবং পর্যালোচনাযোগ্য কারণের উপর ভিত্তি করে হতে হবে যা নাকুন্দা আলী, গোলাম জিলানী এবং বেগম শোরিশ কাশ্মীরির মতো মামলার “বস্তুনিষ্ঠ পরীক্ষায়” (Objective Test) এ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
- ধারা : ৫৪, ১৬৭
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
- অনুচ্ছেদ : ২৬, ৩২, ৩৩, ৩৬ এবং ১০২
- বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪
- ধারা : ৩
অনুবাদক :
১. রাইয়ান তালুকদার
২. ফাহিম আহমেদ
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ