অমূল্য চন্দ্র মোদক বনাম রাষ্ট্র (১৯৮৩)

Amulya C M v State Case FP BN

অমূল্য চন্দ্র মোদক বনাম রাষ্ট্র

সাইটেশন: 35 DLR [1983] 160

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

আপিলকারী : অমূল্য চন্দ্র মোদক (নিম্ন আদালতে বিবাদী)
বিবাদী : রাষ্ট্র (নিম্ন আদালতে বাদী)

ঘটনা :

ভুক্তভোগী কল্পনা রানী ছিলেন অভিযুক্ত অমূল্য চন্দ্র মোদকের প্রতিবেশী। অমূল্য চন্দ্র তার অসুস্থ মায়ের দেখাশোনার জন্য কল্পনা রাণীকে তাদের বাড়িতে থাকতে বলেন। একই বাড়িতে থাকাকালীন অবস্থায়, কল্পনা রাণীকে অভিযুক্ত অমূল্য চন্দ্র বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কল্পনা রাণী এ কথায় রাজি হন এবং একরাতে তারা মালাবদল করেন। এরপর অভিযুক্ত অমূল্য চন্দ্র তার সাথে সহবাস শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে, ভুক্তভোগী গর্ভবতী হয়ে পড়েন, কিন্তু অমূল্য চন্দ্র এবং তার পরিবার বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের বাড়ি থেকেও কল্পনা রাণীকে বের করে দেওয়া হয়।

কল্পনা রানী দাবি করেন যে গোপনে মালা বদলকে বিবাহ হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে অমূল্য চন্দ্র তাকে সহবাসে প্রলুদ্ধ করেছিলেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন যে উক্ত বিবাহের ফলেই তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন।

ভুক্তভোগীর পিতা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন এবং অমূল্য চন্দ্রকে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৯৩ এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে, উক্ত রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা হয়।

ইস্যু :
১. হিন্দু পারিবারিক আইনের অধীনে শুধু মালা বদলই কি একটি বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি জন্য যথেষ্ট?
২. একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী, যিনি তার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার মৌলিক বিষয়গুলো বোঝার মতো জ্ঞান রাখেন, কিন্তু উক্ত বিষয়গুলো পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও যদি তিনি শুধু প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে একজন পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্কে জড়ান, তাহলে তাকে দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী কি ভুক্তভোগী হিসেবে বিবেচনা করা যাবে?

সিদ্ধান্ত :

আপিলের রায়ে, আদালত অমূল্য চন্দ্রকে নির্দোষ ঘোষণা করেন।
আদালত কারণ উল্লেখ করেন যে, বৈধ হিন্দু বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার জন্য দুটি মৌলিক আনুষ্ঠানিকতা আবশ্যক। এগুলো হলো: অগ্নিকে সাক্ষী রেখে মন্ত্রোচ্চারণ এবং সপ্তপদী (অগ্নিকে কেন্দ্র করে সাত চক্র সম্পন্ন করা)। ফলশ্রুতিতে, হিন্দু পারিবারিক আইনের অধীনে শুধু মাত্র মালা বদলকে বিবাহ হিসেবে গণ্য করা হবে না। যেহেতু, অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পূরণ হয়নি সেহেতু, কোন প্রকার বৈধ বিবাহও সম্পন্ন হয় নি, বলে আদালত জানান।

আদালত এ বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ১৭-১৮ বছরের একজন যুবতী নারীকে অবশ্যই হিন্দু বিবাহের আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পর্কে জানা উচিত ছিল। এবং কল্পনা রাণী, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায়, বোঝা উচিত ছিল যে গোপনে মালাবদল কোনো বৈধ হিন্দু বিবাহ নয়। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, কোন প্রকার আইনি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না করে শুধু বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারার অধীনে প্রতারণা হিসাবে গণ্য হয় না।

ফলস্বরূপ, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, বৈধভাবে বিবাহিত এই বিশ্বাস করে কল্পনা রাণী প্রতারিত হননি এবং ধারা ৪৯৩ এর কোনো লঙ্ঘন উক্ত ক্ষেত্রে ঘটেনি।

হিন্দু বিবাহের মৌলিক উপাদানের বিচারিক স্বীকৃতি :
উক্ত মামলায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট, মোল্লা সম্পাদিত ‘হিন্দু আইন’ বইয়ের (একাদশ সংস্করণ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একটি আইনত বৈধ হিন্দু বিবাহের জন্য দুটি মৌলিক উপদানের উপস্থিতি প্রয়োজন। সেগুলো হলো –
১. অগ্নিকে সাক্ষী রেখে মন্ত্রোচ্চারণ।
২. সপ্তপদী, অর্থাৎ অগ্নিকে কেন্দ্র করে সাত চক্র সম্পন্ন করা।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৪৯৩

অনুবাদক :
১. রুদ্র জয়া
২. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ


Cite this Page:

OSCOLA

APA

Bluebook

Share