বেরুবাড়ী ইউনিয়ন মামলা (১৯৬০)

বেরুবাড়ী ইউনিয়ন মামলা (১৯৬০)

বেরুবাড়ী ইউনিয়ন মামলা

উদ্ধৃতি :
বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এবং ছিটমহল বিনিময় বনাম ভারতের সংবিধানের ১৪৫(১) নং অনুচ্ছেদ

সাইটেশন : AIR [1960] SC 845

জুরিসডিকশন : ভারত

ঘটনা :

মামলার মূল বিরোধ ছিল পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বেরুবাড়ী নামক স্থানকে কেন্দ্র করে, যা ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন নামেও পরিচিত, যার আয়তন ছিল ৮.৭৫ বর্গমাইল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সেই সময় বাংলা প্রদেশকেও পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা) এবং পশ্চিম বাংলা (ভারতের অংশ) হিসেবে ভাগ করা হয়। এই বিভাজনের জন্য স্যার সিরিল জন র‍্যাডক্লিফ কে প্রধান করে বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন গঠন করা হয়। উক্ত কমিশন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করে এবং র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ড তৈরি করে। র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ড অনুযায়ী ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এর দক্ষিণাংশ (২.৬৪ বর্গমাইল) পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু পরে জানা যায় যে, সমগ্র ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। এই বিষয় নিয়ে পাকিস্তান সরকার তৎকালীন সময়ে কোনো আপত্তি জানায় নি।

পরবর্তীতে দেখা যায় যে, ভারতের ১১১ টি ছিটমহল পূর্ব পাকিস্তানে আর পূর্ব পাকিস্তানের ৫১ ছিটমহল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। ১৯৪৮ সালের ৪ঠা মে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টার ডোমিনিয়ন কনফারেন্স, ১৯৪৮’ -এ দুই দেশের মধ্যবর্তী সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৪৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর উক্ত কমিটি সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ করে। তদুপরি, “ইন্দো-পাকিস্তান সীমানা নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনাল” গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলাকালীন, দুই রাষ্ট্রের কেউই ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন নিয়ে কোন প্রকার আপত্তি জানায় নি। ১৯৫০ সালে ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদান করেন।

দুই বছর পর পাকিস্তান ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে। পাকিস্তান দাবি করে যে, র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ড অনুসারে, ১২ নং বেরুবাড়ি ইউনিয়ন এর দক্ষিণাংশ (২.৬৪ বর্গ মাইল) পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরবর্তীতে ভুলক্রমে ভারতের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মাঝে ১৯৫৮ সালে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে বলা হয় যে, “১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এর দক্ষিণাংশ (২.৬৪ বর্গ মাইল) পাকিস্তানকে প্রদান করা হবে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের সকল ছিটমহল পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা পাকিস্তানের ছিটমহলগুলো ভারতের নিকট হস্তান্তর করা হবে।” তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ফলশ্রুতিতে, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৩(১) অনুযায়ী উক্ত বিষয়ে আইনি মতামতের জন্য বিষয়টি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নিকট প্রেরণ করা হয়, যা বেরুবাড়ী ইউনিয়ন মামলা, ১৯৬০ নামে পরিচিত। উক্ত বিষয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি ৩টি ইস্যুর আইনি মতামত জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ করেন। এগুলো হলো-

ইস্যু :
১. বেরুবাড়ী ইউনিয়ন সংক্রান্ত “নেহেরু-নুন” চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না?
২. যদি চুক্তিটি বাস্তবায়নে আইন প্রণয়ন প্রয়োজনীয় হয়, তবে ভারতীয় সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের অধীনে সংসদ প্রণীত আইনই যথেষ্ট হবে, নাকি অনুচ্ছেদ ৩৬৮ এর অধীনে সংবিধান সংশোধনেরও প্রয়োজন হবে?
৩. চুক্তিতে উল্লিখিত ছিটমহল সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের অধীনে আইন প্রণয়নই কি যথেষ্ট, নাকি অনুচ্ছেদ ৩৬৮ এর অধীনে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা আছে?

যুক্তিতর্ক :

রাষ্ট্রপক্ষের (অ্যাটর্নি জেনারেল) যুক্তি:
বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেন যে, বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এবং ছিটমহল বিনিময় সম্পর্কিত “নেহেরু-নুন” চুক্তি বাস্তবায়নে কোন আইন প্রণয়নের দরকার নেই, বরং কেবল নির্বাহী বিভাগের দ্বারাই এই চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি আরও যুক্তি দেন যে, চুক্তিটি কেবল র‍্যাডক্লিফ কমিশনের পূর্ব-নির্ধারিত সীমানাকেই স্বীকৃতি দেয় এবং ভারতের কোন অঞ্চল পাকিস্তানকে হস্তান্তর করে না। তিনি বলেন, যদি ভারতীয় সীমানার অধীন কোন অঞ্চল র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডের দ্বারা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়, তবে এই চুক্তির মাধ্যমে নতুনভাবে ভারতের কোনো ভূখণ্ড পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তর করা হয়নি। উপরন্তু, “নেহেরু-নুন” চুক্তির উদ্দেশ্য কেবল র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডের মূল প্রস্তাবনা অনুসারে দু’টি দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের একটি সীমানা সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসা। র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ড অনুসারে এটি স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এর ২.৬৪ বর্গমাইল এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের সীমানার অধীন অবস্থিত।

রাষ্ট্রপক্ষের বিপক্ষে যুক্তি:
বিজ্ঞ আইনজীবী এন.সি. চ্যাটার্জি যুক্তি দেন যে, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুসারে, ভারত একটি “সার্বভৌম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র”। ফলশ্রুতিতে, ভারতের এই ভূখণ্ড সংসদের হস্তক্ষেপের বাইরে এবং এটি সংসদ প্রণীত কোনো আইন অথবা ৩৬৮ নং অনুচ্ছেদের অধীনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা সরকারকে ভারতের যেকোনো অঞ্চল বিদেশি রাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতের ভূখণ্ড অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিকট ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ভারতের সার্বভৌম চরিত্রটিকে ধ্বংস করে যা ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে উল্লিখিত রয়েছে। পাশাপাশি অ্যাডভোকেট এন.সি. চ্যাটার্জি তার দ্বিতীয় যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি যুক্তি দেন, ভারতীয় সংবিধানের ১(৩)(গ) এ কোনো নতুন ভূখণ্ড অধিগ্রহণের কথা বলা হলেও সংবিধানে এমন কোন বিধান নেই যার মাধ্যমে ভারতের কোন ভূখণ্ড কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নিকট ছেড়ে দেওয়া যাবে। উক্ত অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে তিনি বলেন, ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এর দক্ষিণাঞ্চলের ২.৬৪ বর্গমাইল অঞ্চলটি পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তর করা যাবে না।

সিদ্ধান্ত :

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ধার্য করেন যে, বেরুবাড়ী সংক্রান্ত বিষয়ে র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডে বেশকিছু অসংগতি রয়েছে। উক্ত অ্যাওয়ার্ডের বিষয়সমূহের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায় না যে, ১৯৫৮ সালের চুক্তি এই অ্যাওয়ার্ড অনুসারে করা হয়েছে। সুতরাং, আদালত সমগ্র বেরুবাড়ী ইউনিয়নকে “ভারতীয় অঞ্চল” হিসেবে বিবেচনা করেন এবং বলেন “নেহেরু-নুন” চুক্তি মূলত “অন্য রাষ্ট্রের নিকট ভারতীয় ভূখণ্ড সমর্পণ” এর শামিল।

সুপ্রিম কোর্ট আরও উল্লেখ করেন যে “নেহেরু-নুন” চুক্তি অন্য দেশের কাছে ভারতের কিছু অঞ্চল হস্তান্তরকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলস্বরূপ, চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে সংসদকে আইন প্রণয়ন করতে হবে। তবে এই চুক্তি কেবল ভারতীয় সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বরং, প্রথমে ৩৬৮ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, ১ ও ৩ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। পরবর্তীতে ভারতীয় সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদের অধীনে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা যাবে। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেন যে, “নেহেরু-নুন” চুক্তিতে উল্লিখিত ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হলে ৩ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। তবেই কেবল সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদের অধীনে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চুক্তিটি বাস্তবায়ন সম্ভব।

উপরন্তু, সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাডভোকেট এন.সি. চ্যাটার্জির ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে দেওয়া যুক্তির বিরোধিতা করে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হন যে, প্রস্তাবনা ভারতীয় সংবিধানের অংশ নয়। উক্ত বিষয়ে, সুপ্রিম কোর্ট তিনটি যুক্তি দেন-
১. যদি সংবিধান হতে প্রস্তাবনা বাদ দেয়া হয়, তবে সংবিধানের কোনো ত্রুটি হবে না।
২. প্রস্তাবনা সংবিধানের জন্য জরুরি নয়।
৩. প্রস্তাবনা সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি অথবা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

[ভারতীয় সংবিধানের ১(৩)(গ) নং অনুচ্ছেদ নতুন অঞ্চল অধিগ্রহণের বিষয়ে বললেও সংবিধানে এমন কোন অনুচ্ছেদ নেই যা নিজ দেশের কোন অঞ্চল অপর দেশকে প্রদানের বৈধতা দেয়।

অনুচ্ছেদ ১(৩)(গ) বলে –
“ভারতের রাজ্যক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত হইবে –
এরূপ অন্য রাজ্যক্ষেত্রসমূহ যাহা অর্জিত হইতে পারে”

পাশাপাশি, অনুচ্ছেদ ৩(গ) বলে,
“সংসদ বিধি দ্বারা-
যেকোনো রাজ্যের আয়তন হ্রাস করিতে পারেন”

যদি এই অনুচ্ছেদটি আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করা হয়, তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে সংসদ কেবল উক্ত অনুচ্ছেদের দ্বারা “নেহেরু-নুন” চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারবে। তবে, সুপ্রিম কোর্ট এটি স্পষ্ট করেন যে, চুক্তিটিতে ভারতের অঞ্চল অপর একটি দেশকে প্রদানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় চুক্তিটি বাস্তবায়নে অনুচ্ছেদ ৩(গ) কার্যকর হবে না। এই অনুচ্ছেদ কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন ভারতের কোন রাজ্যের আয়তন হ্রাস পায় এবং সেই অঞ্চলটি অপর রাজ্যের সীমানার অন্তর্ভুক্ত হয়।]

পরবর্তী পর্যালোচনা :

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর, ভারত সরকার ১৯৬০ সালে ৯ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১ম তফসিল সংশোধন করে “নেহেরু-নুন” চুক্তিকে আইনি বৈধতা প্রদান করে। এভাবে ভারতীয় সংবিধানের ১ম সিডিউলে “নেহেরু-নুন” চুক্তিটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে, পাকিস্তান-ভারতের মধ্যকার উদীয়মান উত্তেজনার দরুন ১৯৬৫ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধ শুরু হয়। ফলস্বরূপ, ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এর দক্ষিণাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানকে প্রদান করা হয় না এবং প্রস্তাবিত ছিটমহলের বিনিময়ও সম্ভব হয় না। ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাক যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ফলস্বরূপ, পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এভাবে,বাংলাদেশ ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন সহ ছিটমহল সংক্রান্ত বিরোধের উত্তরাধিকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। পরবর্তীতে, ১৬ মে, ১৯৭৪ সালে, বেরুবাড়ী ইউনিয়ন, ছিটমহল এবং সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মাঝে “মুজিব-ইন্দিরা” চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তি অনুযায়ী, ১২ নং বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এর দক্ষিণাঞ্চল (২.৬৪ বর্গমাইল) ভারতের অধিভুক্ত করা হয় এবং বিনিময়ে, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের সাথে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে একটি করিডোর (পরিমাপে ১৭৮ মিটার×৮৫ মিটার) ইজারা দেওয়া হয়। উপরন্তু, চুক্তিটিতে ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পরবর্তীতে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, কাজী মোখলেসুর রহমান, চুক্তিটির বিরুদ্ধে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন যা “কাজী মোখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ” নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার সূচনা করে। ১৯৭৪ সালে, উক্ত মামলার ফলস্বরূপ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩য় সংশোধনী প্রণয়ন করা হয় এবং “মুজিব-ইন্দিরা” চুক্তিকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২(ক) সংশোধিত হয়। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩য় সংশোধনীর মাধ্যমে এবং ২০১৫ সালে ভারতীয় সংবিধানের ১০০তম সংশোধনীর মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হয়েছিল। ফলস্বরূপ, বহু বছর পর ভারতের ভেতরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের নিকট এবং বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত ভারতের ১১১ টি ছিটমহল বাংলাদেশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

একই সাথে, উক্ত মামলায় উল্লেখযোগ্য, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেন যে “প্রস্তাবনা সংবিধানের অংশ নয়”। পরবর্তীতে ‘কেশাভানন্দ ভারতী বনাম কেরালা রাজ্য’ [AIR 1973 SC 1461] মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেন যে “প্রস্তাবনা সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. ভারতীয় সংবিধান
    • অনুচ্ছেদ : ১(৩)(গ), ৩(গ), ১৪৩(১)
  2. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
    • অনুচ্ছেদ : ২(ক)

অনুবাদক :
১. ইশরাক আহসান খান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ


Cite this Page:

OSCOLA

APA

Bluebook

Share