ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য
রেফারেন্স : 1997 17 BLD (AD) 1
জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ
বাদী : ড. মহিউদ্দিন ফারুক
বিবাদী : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ঘটনা :
১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুটি ভয়াবহ বন্যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছিলো। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডি.সি. তে বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভা কর্তৃক এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। একই বছরের ১১ই ডিসেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈদেশিক দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে ❝ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান❞ সংক্ষেপে ❝এফএপি❞ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
❝এফএপি-২০❞ প্রকল্পের কার্যক্রম টাঙ্গাইল সদরে শুরু হয়েছিলো। কিন্তু, “এফএপি-২০” প্রকল্পের ফলে প্রকল্প অঞ্চলের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছিলো এবং উক্ত অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছিলো। একইসাথে, প্রকল্প অঞ্চলের বাহিরের প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছিলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, তৎকালীন “বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি” এর মহাসচিব জনাব ড. মহিউদ্দিন ফারুক উক্ত “এফএপি-২০” প্রকল্পের কার্যক্রম ও বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদের অধীনে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ইস্যু :
১. মহিউদ্দিন ফারুকের লুকাস স্ট্যান্ডি ছিল কি না?
২. ‘সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি‘ কে?
সিদ্ধান্ত :
জনাব মহিউদ্দিন ফারুক সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদে অধীনে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে মহিউদ্দিন ফারুক এর লুকাস স্ট্যান্ডি (মামলা করার আইনি অধিকার) নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। লুকাস স্ট্যান্ডির বিষয় উল্লেখপূর্বক হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান একইসাথে মামলা খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে মামলাটি আপিল বিভাগে উত্থাপন করা হয়। আপিল বিভাগ উক্ত মামলায় একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। আপিল বিভাগ ❝সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি❞ শব্দটির ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আরো বিস্তৃতি প্রদানের মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
মহিউদ্দিন ফারুক যুক্তিতর্কে উল্লেখ করেন, ❝সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের অর্থ হচ্ছে তাঁর সৃষ্টিজীব ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করা।❞ উক্ত ঘটনায় আপিলকারী একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কারণ আল্লাহর সৃষ্টিজীব ও পরিবেশ ধ্বংসের মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিল। জনাব মহিউদ্দিন ফারুক তার উত্থাপিত যুক্তিতে গুরুত্বারোপের লক্ষ্যে সংবিধানের প্রস্তাবনার দিকে নজর প্রদানেরও অনুরোধ করেন। উপস্থাপিত যুক্তিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক জনাব মোস্তফা কামাল ❝সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি❞ -শব্দের ব্যাখ্যায় উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন কে সমর্থন করেন।
❝কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি❞ শব্দের ব্যাখ্যায় বিচারক জনাব মোস্তফা কামাল বলেন, উক্ত শব্দটি দ্বারা বিশেষভাবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বা ব্যক্তিদ্বয়কে বুঝানো সংবিধান পরিপন্থি। রায়ে মাননীয় বিচারক উল্লেখ করেন, যদি তিনি (কোন ব্যক্তি) সাধারণ জনগণের সাথে সংঘটিত কোন অন্যায় বা সাধারণ জনগণের কোন ক্ষতির ফলে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে, এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিষয়টি জরুরি নয়।
অপরদিকে, সংবিধানের কোথাও ❝সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি❞ -র অর্থ সংজ্ঞায়িত করা হয় নি। ফলশ্রুতিতে, নির্দিষ্টভাবে শব্দটির ব্যাখ্যা করা দুষ্কর ছিল। বেরুবাড়ি মামলায় উক্ত শব্দের বিস্তৃত ব্যাখ্যার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে উচ্চ আদালত ❝প্রো বোনো পাবলিকো❞ (জনস্বার্থে মামলা) বিষয়ক মামলাগুলো আমলে নিতে অনাগ্রহী ছিল। কিন্তু উক্ত মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক ❝সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি❞ এর উদার ব্যাখ্যার মাধ্যমে জনস্বার্থে সংঘটিত মামলার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়।
উক্ত মামলায়, একজন ব্যক্তিকে জনস্বার্থে মামলা (PIL) দায়ের করার অনুমতি দেওয়ার জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ❝রিট পিটিশনে, “বেলা” দেশের জনগণকে পরিবেশগত ঝুঁকি ও ভারসাম্যহীনতার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আইন প্রয়োগ করা হয়েছে এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এই উদ্বেগটি আপিলকারীকে ‘সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য যথেষ্ট। তাই, তাদের পক্ষে রিট আবেদন করার জন্য লুকাস স্ট্যান্ডি দেওয়া উচিত।❞ এর ফলে, আমাদের আইনি ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
- অনুচ্ছেদ : ১০২
অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
২. ইমরান হোসেন ইমন
৩. ফাহিম আহমেদ
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ