ভারত অধিরাজ্য বনাম মাদ্দালা থাথিয়া
সাইটেশন : 1966 AIR 1724
জুরিসডিকশন : ভারত
আপিলকারী: ভারত অধিরাজ্য (নিম্ন আদালতে বিবাদীপক্ষ)
বিবাদী: মাদ্দালা থাথিয়া (নিম্ন আদালতে বাদীপক্ষ)
ঘটনা :
ভারত অধিরাজ্য, মাদ্রাজ ও সাউদার্ন মাহারাট্টা রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের মাধ্যমে, ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের জন্য রেলওয়ের শস্য দোকানগুলিতে ১৪,০০০ মণ আখের গুড় সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। বিবাদী একটি দরপত্র জমা দেন, যেখানে একটি শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল যে, প্রশাসন যেকোনো সময় চুক্তি বাতিল করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট অংশের জন্য কোনো বকেয়া দাবি করা যাবে না। ১৯৪৮ সালের ২৯শে জানুয়ারি তারিখে একটি চিঠির মাধ্যমে দরপত্রটি গ্রহণ করা হয় এবং ৭,৯০০ টাকা জামানত হিসেবে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তীতে, ১৯৪৮ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি আরেকটি চিঠির মাধ্যমে দরপত্রে উল্লিখিত শর্তাবলী মেনে নেয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহের বিষয়টি মেনে নেয়া হয়েছে এই মর্মে দরপত্র গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
পরবর্তীতে, ১৯৪৮ সালের ৮ই মার্চ তারিখে একটি চিঠির মাধ্যমে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বাকি গুড় সরবরাহ বন্ধ করে চুক্তিটি বাতিল করে দেন। প্রশাসন দরপত্রের সময় উল্লিখিত বাতিলকরণ বিধানের দোহায় দিয়ে বিবাদীর অভিযোগ খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বিবাদী ভারত অভিরাজ্যের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। বিচারিক আদালত উক্ত মামলা খারিজ করে দেন এবং প্রশাসনের কোনো দায় ছাড়াই চুক্তি বাতিল করার অধিকারকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেন। তবে, হাই কোর্ট রায় দেন যে, চুক্তির বাতিলের ধারা (cancellation clause) অবৈধ এবং মামলাটি বিচারিক আদালতে ফেরত পাঠিয়ে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে বলেন। ভারত অভিরাজ্য উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে বিশেষ অনুমতি (special leave) নিয়ে আপিল করে।
ইস্যু :
১. আপিলকারী কি আইনত ১৪,০০০ মণ গুড় সম্পূর্ণ ক্রয় করতে বাধ্য ছিল, নাকি শুধু প্রয়োজন অনুসারে সর্বোচ্চ উক্ত পরিমাণ পর্যন্ত ক্রয় করার দায়িত্ব ছিল?
২. প্রশাসনের পক্ষে একতরফাভাবে যেকোনো সময় চুক্তি বাতিল করার অনুমতি দেয়া ধারাটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চুক্তির প্রেক্ষিতে বৈধ এবং কার্যকর ছিল কিনা?
যুক্তিতর্ক :
আপিলকারীর যুক্তি:
চুক্তির শর্তানুসারে, আপিলকারী শুধু প্রয়োজনীয় পরিমাণ গুড় ক্রয় করতে সম্মত হয়েছিল সর্বোচ্চ ১৪,০০০ মণ পর্যন্ত। সুতরাং পুরো পরিমাণ ক্রয় করতে সে আইনত বাধ্য ছিল না। বিবাদী স্পষ্টভাবে সেই ধারাটি মেনে নিয়েছিল যা আপিলকারীকে যেকোনো সময় চুক্তি বাতিল করার অনুমতি দেয়। ফলে বাতিলকরণ ধারাটি চুক্তির অংশ হিসেবে বৈধ এবং বাধ্যতামূলক ছিল।
বিবাদী পক্ষের যুক্তি:
চুক্তিটি নির্দিষ্ট ১৪,০০০ মণ গুড়ের জন্য নির্ধারিত তারিখে (প্রাথমিকভাবে ১৯৪৮ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারির আদেশ অনুযায়ী এবং পরবর্তীতে ২৮শে ফেব্রুয়ারির চিঠি দ্বারা সংশোধিত) করা হয়েছিল, এবং বাতিলকরণ ধারাটি চুক্তির সামগ্রিক শর্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এমনকি যদি ধারাটি বৈধ হয়, তবুও বিবাদীর দাবি ছিল যে চুক্তি শুধু যুক্তিসংগত কারণে বাতিল করা যেতে পারে, ইচ্ছামতো নয়।
সিদ্ধান্ত :
হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত:
হাইকোর্ট রায় দেন যে চুক্তি বাতিলের ধারাটি অবৈধ এবং মামলাটি ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য পুনরায় বিচারিক আদালতে ফেরত পাঠানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত:
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, শুধু দরপত্র গ্রহণের পর্যায়ে কোনো বাধ্যতামূলক চুক্তি গঠিত হয়নি। কারণ, এতে সরবরাহের নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ ছিল না এবং জামানত জমা দেওয়ার শর্তে একটি আনুষ্ঠানিক সরবরাহ আদেশ জারির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি কেবল আনুষ্ঠানিক সরবরাহ আদেশ জারির পর গঠিত হয় এবং ১৯৪৮ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারির চিঠি, যেখানে ১৪,০০০ মণ গুড় চারটি কিস্তিতে সরবরাহের কথা উল্লেখ ছিল তা একটি বাধ্যতামূলক এবং কার্যকর চুক্তি গঠন করেছিল। বাতিলকৃত ধারার অধীনে আপিলকারীর আনুষ্ঠানিকভাবে জারিকৃত আদেশ বাতিল করার কোনো অধিকার ছিল না, কারণ দরপত্রের ২ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত বাতিলকরণের ক্ষমতা কেবল সেইসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেগুলির জন্য এখনও আদেশ জারি করা হয়নি, নির্দিষ্ট ও নিশ্চিত সরবরাহ আদেশের আওতাধীন পণ্যের ক্ষেত্রে নয়। সেই অনুযায়ী, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে গণ্য করা হয় এবং তা বহাল রাখা হয়।
আপিলটি খরচসহ খারিজ করা হয়, যা ১৯৪৮ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারির আদেশের বাধ্যতামূলক প্রকৃতি এবং ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া আদেশ বাতিলের কোনো দাবির অবৈধতাকে আরও জোরদার করে।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- চুক্তি আইন, ১৮৭২ (ভারত)
অনুবাদক :
১. রোজিনা আকতার নিশু
২. মো. আতিকুর রহমান
[সতর্কতা : উক্ত মামলার বাংলা সংস্করণটি মূল ইংরেজি হতে অনূদিত। অর্থগত সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে, মূল ইংরেজি সংস্করণ প্রাধান্য পাবে।]
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ