টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বনাম গ্রেটার লন্ডন কাউন্সিল (১৯৮৩)

Tate & Lyle v Greater London Case FP BN

টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বনাম গ্রেটার লন্ডন কাউন্সিল

রেফারেন্স : [1983] 2 AC 509

জুরিসডিকশন : যুক্তরাজ্য

বাদী : টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং অন্যান্য
বিবাদী : গ্রেটার লন্ডন কাউন্সিল এবং অন্যান্য

ঘটনা :

বাদী, টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নর্থ উলউইচে টেমস নদীর উত্তর তীরে একটি চিনি শোধনাগার পরিচালনা করত। ১৯২২ সালে, লন্ডন বন্দর কর্তৃপক্ষ (পিএলএ) টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে তাদের শোধনাগারের পাশে নদীতে একটি জেটি (ঘাট) নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলো, যা “রিফাইন্ড সুগার জেটি” নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালের মধ্যে, বিবাদী, গ্রেটার লন্ডন কাউন্সিল (GLC) লন্ডন বন্দর কর্তৃপক্ষের (PLA) অনুমোদন সাপেক্ষে, উত্তর উলউইচ এবং উলউইচের মধ্যে টেমস নদীতে উলউইচ ফেরির জন্য দুটি নতুন ফেরি টার্মিনাল নির্মাণ করে। নতুন ফেরি টার্মিনালগুলো “J” আকৃতির ঘাটের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল, যা টেমস নদীর উত্তর ও দক্ষিণ তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে, এরূপ নকশার ফলে নদীর পানি প্রবাহে অপ্রত্যাশিত এবং অপ্রয়োজনীয় বাধার সৃষ্টি হচ্ছিল। যা, উলউইচ এলাকার টেমস নদীর সাথে মিলিত হয়ে, মূল নৌপথের উপরের দিকে এবং নদীর উত্তর তীরে পানির প্রবাহের গতি কমিয়ে দিয়েছিলো। পানির গতি কমে যাওয়ায় নদীতে পলি জমতে শুরু করে, ফলশ্রুতিতে, নদীর গভীরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, যা নৌযান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছিল।

অপরদিকে, একটি উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে, টেট অ্যান্ড লাইলে নতুন একটি জেটি (ঘাট) নির্মাণ এবং বড় জাহাজ (যা কাঁচা চিনি বহন করবে) পরিচালনার জন্য পানির গভীরতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে, যা ১৯৬৬ সালে সম্পন্ন হয়।

বাদী কর্তৃক উত্থাপিত মূল দাবি ছিল যে, বিবাদীর তৈরি নতুন ফেরি টার্মিনালের কারণে সৃষ্ট পলি জমা হওয়ার ফলে বড় জাহাজগুলোর নোঙর করা সম্ভব হচ্ছিল না এবং অতিরিক্ত ড্রেজিংয়ের (পলি উত্তোলনের) প্রয়োজন হচ্ছিল। উক্ত সমস্যা ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, জিএলসি (GLC) এবং পিএলএ (PLA)-এর বিরুদ্ধে অবহেলা, ব্যক্তিগত উপদ্রব এবং জন উপদ্রবের তৈরির অভিযোগ এনে টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মামলা দায়ের করে। তারা জিএলসি (GLC) এবং পিএলএ (PLA)-র নিকট ৫৪০,০০০ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করে, যা অতিরিক্ত ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যয় হয়েছিল। টেট অ্যান্ড লাইলে দাবি করে যে, অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড অবহেলাজনিত ছিল, ফলশ্রুতিতে, তাদের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য অভিযুক্তরা দায়ী।

ইস্যু :
১. বন্দরের এরূপ নকশার ফলে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়া থেকে উদ্ভূত টেট অ্যান্ড লাইল এর ক্ষতির জন্য কি জিএলসি (GLC) এবং পিএলএ (PLA) দায়ী ছিল?
২. জিএসসি (GLC)-এর ফেরি টার্মিনালের ডিজাইনের কারণে পলি জমা এবং এর ফলে ড্রেজিং খরচ এর বিষয়টি কি অনুমেয় ছিল?

যুক্তিতর্ক :

টেট অ্যান্ড লাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যুক্তি প্রদান করে যে, জিএলসি (GLC) কর্তৃক ফেরি টার্মিনাল নির্মাণের ফলে নদীতে পলি জমা হওয়া, পলির ফলে নৌপরিবহনে বাধা সৃষ্টি হওয়া এবং অন্যান্য অসুবিধা সৃষ্টি হওয়া এসব বিষয় অনুমেয় ছিল। ডোনোহিউ বনাম স্টিভেনসন (১৯৩২) মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে তারা দাবি করে, উক্ত বিষয়গুলো জিএলসি (GLC) এর দায়বন্ধতার (duty of care) অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং অ্যান্স বনাম মারটন বোরো কাউন্সিল (১৯৭৮) মামলার ভিত্তিতে তারা এ যুক্তিও উপস্থাপন করে যে, যেহেতু গ্রেটার লন্ডন কাউন্সিল একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান/কর্তৃপক্ষ সেহেতু তাদের সকল অনুমোদিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য তারাই দায়ী।

অপরদিকে, জিএলসি (GLC) এবং পিএলএ (PLA) দাবি করে যে, আইনসম্মতভাবে অনুমোদিত নির্মাণকাজের ফলে সৃষ্ট পলিমাটি জমার বিষয়ে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা যুক্তি উপস্থাপন করে যে, উক্ত ঘটনায় বাদীর কোনো ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘন হয়নি, কারণ, নদীতীরবর্তী কোন বিষয়ের অধিকার (riparian rights), পানির গভীরতার নিশ্চয়তা প্রদানের সাথে সম্পর্কিত নয়।

সিদ্ধান্ত :

বিচারিক আদালত এবং আপিল আদালত :
বাদীর ব্যক্তিগত উপদ্রব/সমস্যা তৈরি, দায়িত্বে অবহেলা এবং জন উপদ্রব সম্পর্কিত দাবি খারিজ করে দেয়া হয়। আদালত টেট অ্যান্ড লাইলের ব্যক্তিগত অধিকার উপভোগে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপের বিষয় খুঁজে পাননি এবং জন উপদ্রব তৈরির জন্য দায় নির্ধারণের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত যোগসাজশ খুঁজে পাননি।

হাউস অফ লর্ডস :
হাউজ অব লর্ডস আপিল আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং বাদী কর্তৃক উত্থাপিত দাবি খারিজ করে দেন। বিচারপতি টেম্পলম্যান এ বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, টেট অ্যান্ড লাইল এর তাদের জেটির নিকটবর্তী নদীর গভীরতা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অধিকার নেই। কারণ, এটি নদী তীরবর্তী বস্তুর অধিকার (riparian rights) এর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যেহেতু, কোন ব্যক্তিগত অধিকার উপভোগে হস্তক্ষেপ করা হয় নি, সেহেতু, বিবাদীকে ব্যক্তিগত উপদ্রব তৈরি দায় দোষী করা যাবে না।

হাউস অব লর্ডস জন উপদ্রব (public nuisance) সৃষ্টির জন্য দায়বদ্ধতার প্রশ্নে আপিল আদালতের ঘোষিত রায়ের বিপরীত রায় প্রদান করেন। জিএলসি (GLC) – কে টেমস নদীর প্রাকৃতিক গভীরতা হ্রাসের দরুন নৌচলাচলের বিগ্ন সৃষ্টির মাধ্যমে জনসাধারণের অধিকারে হস্তক্ষেপের দায়ে দোষী হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলশ্রুতিতে, টেট অ্যান্ড লাইল বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যেখানে তাদের নৌচলাচলের সচল রাখার জন্য অতিরিক্ত ড্রেজিং খরচ বহন করতে হয়েছিল। যার ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের ৪০৫,০০০ পাউন্ড (ড্রেজিং খরচের তিন-চতুর্থাংশ) প্রদান করা হয়।

যদিও উক্ত মামলায়, পিএলএ (PLA) – কে দায়ী করা হয় নি। কারণ, জিএলসি (GLC) এর নির্মিত টার্মিনালের ফলে নদীতে পলি জমে এরূপ সমস্যার উদ্ভব ঘটাতে পারে, এ বিষয়টি তারা পূর্বেই অনুমান করতে পেরেছিল এই মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।


অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
২. রাইয়ান তালুকদার

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share