ফিলো রিগস বনাম এলমার ই. পালমার
রেফারেন্স : 115 NY 506
জুরিসডিকশন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আবেদনকারী : ফিলো রিগস
বিবাদী : এলমার ই. পালমার
ঘটনা :
ভুক্তভোগী ফ্রান্সিস বি. পালমার ১৩ আগস্ট ১৮৮০ তারিখে একটি উইল করেন। সেই উইলে তিনি তার সম্পত্তির সামান্য অংশ তার দুই কন্যা, মিসেস রিগস এবং মিসেস প্রেস্টনকে দিয়ে যান। বাকি সম্পত্তি তিনি তার নাতি, এলমার ই. পালমারের (বিবাদী) নামে দিয়ে যান। উইলে এও বলা হয় যে, যদি এলমার অল্প বয়সে, অবিবাহিত অবস্থায় এবং সন্তানহীন মারা যান, তাহলে সম্পত্তি তার দুই কন্যার মধ্যে ভাগ হবে।
ফ্রান্সিস বি. পালমার ছিলেন একজন বিপত্নীক। তবে, মার্চ ১৮৮২-তে তিনি মিসেস ব্রিসি নামের একজন মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে বলা হয় যে, ফ্রান্সিসের (স্বামীর) মৃত্যুর পর তিনি তার জীবনের বাকি সময় ফ্রান্সিসের খামারে বসবাসের অধিকার পাবেন। অপরদিকে এলমার উক্ত উইল এবং উত্তরাধিকার সম্পর্কিত বিষয় জানতেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, জনাব পালমার হয়তো তার পক্ষে করা উইলটি পরিবর্তন করতে পারেন। তাই, সম্পত্তি দ্রুত ভোগ করার এবং দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে, তিনি তার মাতামহকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করেন। হত্যার পর, তিনি উইলের ভিত্তিতে সম্পত্তির দাবি করেন।
ইস্যু : উইলকারীর হত্যাকারী হওয়া সত্ত্বেও এলমার কি উক্ত উইল হতে উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারেন?
সিদ্ধান্ত :
মামলাটি যখন আপিল আদালতে পৌঁছালে দুই রকম মতামত তৈরি হয়। বিচারপতি রবার্ট ইয়ার্ল, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে, জনস্বার্থ বিষয়ক একটি মৌলিক নীতি “ex turpi causa non oritur action” এর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, যার অর্থ, ‘কেউই নিজের করা অন্যায় কাজ থেকে লাভবান হতে পারে না’। তিনি উল্লেখ করেন যে, এলমার পালমার, যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তার মাতামহকে হত্যা করেছিলেন, তাকে সম্পত্তি উত্তরাধিকার করতে দেওয়া ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতির পরিপন্থি হবে। বিচারপতি ইয়ার্ল আরও পর্যবেক্ষণ করেন যে, উত্তরাধিকার এবং উইলের বিষয়ক আইনসমূহে সরাসরি এরূপ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয় নি, যেখানে একজন সুবিধাভোগী উইলকারীকে খুন করেন, তবে আদালতকে এমন পরিস্থিতিতে এরূপ আইনের ব্যাখ্যা দিতে হবে যাতে যুক্তিসংগত ও ন্যায়সংগত ফলাফল আসে। তিনি যুক্তি দেন যে এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইনের আক্ষরিক অর্থের বাইরে গিয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ, আইনের উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। তাই বিচারিক কার্যে আইনের ব্যাখ্যার সময় উক্ত লক্ষ্যটি বজায় রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
অপরদিকে, বিচারক জন ক্লিনটন গ্রে উক্ত বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে, লিখিত আইনের আক্ষরিক ব্যাখ্যার পক্ষে মতামত দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিদ্যমান আইনগুলিতে হত্যার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে, তবে এরূপ পরিস্থিতিতে উত্তরাধিকার হওয়া থেকে কাউকে বঞ্চিত করার কোনো আইন অন্তর্ভুক্ত হয়। বিচারক গ্রে’র মতে, এলমারকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা আইনে অনুমোদিত নয়, এবং এরূপ করা, তার উপর একটি অতিরিক্ত শাস্তি আরোপ করার শামিল। তিনি আরও দাবি করেন যে, নৈতিক যুক্তির ভিত্তিতে নতুন আইনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন নিয়ম তৈরি করা আদালতের এখতিয়ারের বাইরে, কারণ এ এখতিয়ার কেবল আইনসভার।
অবশেষে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে আদালত এলমার পালমারকে তার মাতামহের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়া থেকে বিরত রাখে। এই সিদ্ধান্ত একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যে আদালত ন্যায্যতার নীতির প্রয়োগ করে অন্যায় ও অনৈতিক ফলাফল প্রতিরোধ করতে পারে, এমনকি স্পষ্ট আইনি বিধান না থাকলেও।
সংশ্লিষ্ট প্রবাদ :
১. Ex turpi causa non oritur actio : লাতিন এই প্রবাদটির অর্থ হলো, ‘কেউই নিজের করা অন্যায় কাজ থেকে লাভবান হতে পারে না’। এটি নির্দেশ করে যে, আদালত এমন কোনো আবেদনকারীকে সহায়তা করবে না, যে তার মামলা প্রতিষ্ঠা করতে বেআইনি বা অনৈতিক কাজের ওপর নির্ভর করে।
উক্ত মামলায়, আদালত এই নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে অভিযুক্ত এলমারকে তার মাতামহকে হত্যা করে সম্পত্তি অর্জনের চেষ্টা থেকে বিরত রেখেছিল।
২. ন্যায়পরায়ণ বিচার প্রার্থীকে অবশ্যই পরিষ্কার হাতে আসতে হবে : এই প্রবাদটির অর্থ হলো, যদি কেউ ইক্যুইটি আদালতে সাহায্য চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং সৎ বিশ্বাসী হতে হবে। তাকে উক্ত বিষয়ে কোনো অনৈতিক, অসৎ বা অবৈধ কাজে জড়িত থাকা যাবে না। এটি ইক্যুইটি আইনের মূলনীতিগুলোর একটি।
এই মামলায়, আদালত বিবাদীর যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন কারণ তিনি অন্যায় ও অবৈধ কাজ করেছিলেন এবং তারপর প্রতিকার চেয়েছিলেন। যেহেতু এলমার ইতোমধ্যেই অন্যায় কাজে জড়িত ছিলেন, তাই আদালত তাকে কোনো প্রকার সহায়তা প্রদান করেনি।
অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ