র্যাটেন বনাম কুইন
সাইটেশন : [1971] 3 All ER 801
জুরিসডিকশন : অস্ট্রেলিয়া
আপিলকারী : লেইথ ম্যাকডোনাল্ড র্যাটেন (নিম্ন আদালতে অভিযুক্ত)
বিবাদী : কুইন (নিম্ন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ)
ঘটনা :
আপিলকারী র্যাটেনকে তার স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্য একজন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ই মে, অভিযুক্তের নিজস্ব একটি শটগান দ্বারা বাড়ির রান্নাঘরে অভিযুক্তের স্ত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেদিন দুপুর ১:১৫ মিনিটে স্থানীয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কর্মরত টেলিফোন অপারেটর, মিস জ্যানেট এল ফ্লাওয়ার্স, সেই বাড়ি থেকে একটি ফোনকল গ্রহণ করেন। মিস জ্যানেট সাক্ষ্য দেন যে, ফোনকলের অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেছিলেন, “দয়া করে পুলিশকে দিন!” এবং সে মুহূর্তে তিনি অত্যন্ত আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তির কণ্ঠস্বর খুবই তীক্ষ্ণ ছিল, অতএব, ফোনকারী ছিলেন একজন নারী। কিছুক্ষণের মধ্যেই কলটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । পুলিশকে অবহিত করার পর তারা আনুমানিক দুপুর ১:২০ মিনিটে র্যাটেনের পরিবারের নম্বরে ফোন করে এবং র্যাটেনের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় অভিযুক্তের স্ত্রী ইতোমধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
র্যাটেন হত্যার অভিযোগটি অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে, শটগানটি পরিষ্কার করার সময় দুর্ঘটনাবশত গুলি বের হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে দুটি ডাবল-ব্যারেল শটগান, একটি রাইফেল এবং কিছু পরিষ্কারের সামগ্রী খুঁজে পায়। যে শটগানটি দ্বারা ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হয়েছিল, সেটি সাধারণত র্যাটেন ব্যবহার করতেন না। কয়েক মাস আগে একজন বন্দুক মেরামতকারী সেটি পরীক্ষা করে আনলোডেড (গুলিবিহীন) অবস্থায় ফেরত দিয়েছিলেন এবং তারপর থেকে এটি ব্যবহার করা হয়নি। র্যাটেন যখন বন্দুকটি পরিষ্কারের জন্য রান্নাঘরে নিয়ে আসেন তখন শটগানটি কিভাবে লোডেড (গুলিযুক্ত) হলো, এ বিষয়ে তিনি যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানে ব্যর্থ হন। র্যাটেন দাবি করেন যে, টেলিফোন অপারেটরের বক্তব্য ‘হিয়ারসে’ (শোনা কথা) -এর আওতায় পড়ে এবং ‘হিয়ারসের বিপরীত নিয়ম’ এর ব্যতিক্রমের অধীনে পড়ে না। অতএব, টেলিফোন অপারেটরের বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
ইস্যু :
১. টেলিফোন অপারেটরের বক্তব্য কি ‘হিয়ারসে’ নিয়মের রেস গেসটা (res gestae) ব্যতিক্রমের আওতায় পড়ে?
২. টেলিফোন অপারেটরের বর্ণনা অনুযায়ী, টেলিফোন অপারেটর ও ভুক্তভোগীর মধ্যেকার কথোপকথন কি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য?
সিদ্ধান্ত :
প্রিভি কাউন্সিল রায় প্রদান করেন যে, ভুক্তভোগীর সাথে টেলিফোন অপারেটরের কথোপকথন এবং পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যুর মধ্যে সময় ও স্থানগত দিক দিয়ে যথেষ্ট যোগসূত্র ছিল। লর্ড উইলবারফোর্স বলেন, “যেভাবে উক্তিটি প্রদান করা হয়েছিল (ফোনকলে পুলিশ চাওয়ার সময়) এবং যেই স্বরে কথা বলা হয়েছিল, তা স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশ করে যে সমসাময়িক ঘটনার প্রচণ্ড মানসিক চাপে মৃত ব্যক্তি এই বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।”
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে এই ফোন কলের পর্যাপ্ত যোগসাজশ ছিল, যেখানে ভুক্তভোগীর আতঙ্কের লক্ষণ প্রকার পেয়েছিল। ফলে, এটি (ফোন কল) একই ঘটনার (হত্যাকাণ্ডের) অংশ হিসেবে বিবেচ্য। ফলশ্রুতিতে, প্রিভি কাউন্সিল রায় প্রদান করেন যে, মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে ভুক্তভোগীর সাথে তার কথোপকথন বর্ণনা করে টেলিফোন অপারেটরের বক্তব্য হিয়ারসে নিয়মের একটি ব্যতিক্রম এবং সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাই, আপিল খারিজ করে হত্যার সাজা বহাল রাখা হয়।
সংশ্লিষ্ট নীতি:
হিয়ারসের বিপরীত নীতি: যখন কোনো সাক্ষী এমন কিছু সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন যা তিনি অন্য কারো থেকে জেনেছেন এবং নিজে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যক্ষ করেননি, তখন তা ‘হিয়ারসে’ (শোনা কথা) হিসেবে গণ্য হয়। মামলার শুনানিতে এরূপ বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
রেস গেসটা নীতি: যখন কোনো ঘটনা মূল ঘটনার সাথে এতোটাই ওতপ্রোত ভাবে সংযুক্ত থাকে যে, দুটি ঘটনাকে একটি ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তখন তাকে রেস গেসটা বলে এবং তখন এটি সাক্ষ্য হিসেবেও গ্রহণযোগ্য। রেস গেসটা (Res gestae) (হিয়ারসে) hearsay নিয়মের একটি ব্যতিক্রম।
অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
২. এস. এম. মঞ্জুর মোর্শেদ
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ