হার্ভে বনাম ফেসি
রেফারেন্স : [1893] AC 552
জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড
বাদী : হার্ভে
বিবাদী : ফেসি
ঘটনা :
বিবাদী, জনাব ফেসি, ছিলেন জ্যামাইকার কিংস্টোনের একজন ব্যবসায়ী। তিনি “বাম্পার হল পেন” নামক একটি জমির মালিক ছিলেন এবং তিনি উক্ত জমি বিক্রি করার জন্য আগ্রহী ছিলেন। জনাব ফেসির নিকট, বাদী জনাব হার্ভে, একটি টেলিগ্রাফ পাঠিয়ে জানতে চান, জনাব ফেসি তার “বাম্পার হল পেন” বিক্রি করতে ইচ্ছুক কিনা? এবং যদি ইচ্ছুক হন তাহলে সর্বনিম্ন নগদ মূল্য কত? জনাব ফেসি টেলিগ্রাফের প্রতিউত্তরে জানান, ❝”বাম্পার হল পেন” -এর সর্বনিম্ন নগদ মূল্য ৯০০ পাউন্ড।❞ জনাব হার্ভে তৎক্ষণাৎ টেলিগ্রাফের মাধ্যমে জানান যে, তারা ৯০০ পাউন্ডের বিনিময়ে “বাম্পার হল পেন” ক্রয় করতে আগ্রহী এবং প্রয়োজনীয় সকল দলিলাদি প্রেরণ করতে অনুরোধ করেন যাতে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে জমির মালিকানা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু জনাব ফেসি উক্ত টেলিগ্রাফের কোন উত্তর প্রদান করেন না এবং অন্য একজন ক্রেতার নিকট “বাম্পার হল পেন” বিক্রি করে দেন।
ফলশ্রুতিতে, জনাব হার্ভে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে জনাব ফেসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ইস্যু : বিবাদী কর্তৃক “বাম্পার হল পেন” এর দাম উল্লেখ করে প্রেরিত টেলিগ্রাফটি কি চুক্তির লক্ষ্যে একটি “প্রস্তাব” নাকি সাধারণ “আহ্বানপত্র” মাত্র?
সিদ্ধান্ত :
প্রিভি কাউন্সিলের বিচারিক পরিষদ বিবাদীর পক্ষে রায় প্রদান করেন এবং হার্ভি ও ফেসির মধ্যে কোনো প্রকার বাধ্যতামূলক চুক্তি হয়নি বলে জানান।
কাউন্সিল উল্লেখ করেন, বিবাদী কর্তৃক প্রেরিত টেলিগ্রাফ, যার থেকে বিতর্কের উৎপত্তি সেটি একটি প্রতিউত্তরমূলক টেলিগ্রাফ ছিল, যেখানে লেখা ছিল ❝”বাম্পার হল পেন” এর সর্বনিম্ন মূল্য ৯০০ পাউন্ড❞, যা চুক্তির লক্ষ্যে “প্রস্তাব” নয় বরং “আহ্বানপত্র” হিসেবে বিবেচ্য। বিবাদীর দেয়া প্রতি উত্তরটি কোন চুক্তি তৈরির বাধ্যবাধকতা স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করে না। কোন বস্তুর একটি মূল্য উল্লেখ করা কখনও চুক্তির “প্রস্তাব” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না, বরং এটি উক্ত বস্তুর মূল্য বিষয়ে আলোচনা করার জন্য একটি “আহ্বান” মাত্র। একটি আইনি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন, যা টেলিগ্রামের মাধ্যমে করা যোগাযোগে অনুপস্থিত ছিল।
উক্ত ঘটনায় এটি পরিলক্ষিত হয় যে, বাদী এরূপ বিশ্বাস করেছিলেন যে, মূল্য উল্লেখপূর্বক প্রেরিত বিবাদীর টেলিগ্রাফটি একটি প্রস্তাব এবং প্রতিউত্তরে তিনি যে টেলিগ্রাফ প্রেরণ করেন, যেখানে লিখা ছিল, ❝৯০০ পাউন্ডের বিনিময়ে আমরা বাম্পার হল পেন কিনতে আগ্রহী। দয়া করে প্রয়োজনীয় দলিলাদি প্রেরণ করুন যাতে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে জমির মালিকানা গ্রহণ করতে পারি❞, এটি উক্ত প্রস্তাবের গ্রহণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি আইনি চুক্তি সংগঠিত হয়েছে।
প্রিভি কাউন্সিল সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, বিবাদীর প্রথম বক্তব্যটি, যেখানে দামের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা কোনো চুক্তির “প্রস্তাব” নয় বরং “আহ্বান” ছিল এবং হার্ভের দেওয়া প্রতিউত্তরটি প্রকৃতপক্ষে একটি “প্রস্তাব” ছিল। আইনি চুক্তি গঠনের জন্য উক্ত প্রস্তাবটি ফেসি কর্তৃক গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ছিল, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। কাউন্সিল উল্লেখ করেন, একটি বক্তব্যকে “প্রস্তাব” হিসাবে বিবেচনা করার জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- প্রস্তাবকারীকে অবশ্যই, প্রস্তাব গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে, প্রস্তাবের শর্তাবলি দ্বারা আবদ্ধ হবেন এরূপ ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ প্রদর্শন করতে হবে।
- প্রস্তাবটি অবশ্যই প্রস্তাব গ্রহীতার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করতে হবে এবং তারা দ্বারা গৃহীত হতে হবে। অপ্রেরিত প্রস্তাব কখনোই গৃহীত হবে না।
- প্রস্তাবটি এক্ষেত্রে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হতে হবে। কোন অনির্দিষ্ট বা অস্পষ্ট বিবৃতি কখনো প্রস্তাব হিসেবে বিবেচ্য হবে না।
এই ক্ষেত্রে, এটি স্পষ্ট হয়েছিল যে, ফেসির কার্যক্রম কোন বৈধ প্রস্তাব গঠন করেনি কারণ শর্তাবলি দ্বারা আইনত আবদ্ধ হওয়ার কোন অভিপ্রায় বা ইচ্ছা উক্ত ক্ষেত্রে ছিল না। এছাড়াও, বাদী এবং বিবাদীর মধ্যে আর কোন আলোচনা হয়নি। হার্ভের উদ্দেশ্যে পরবর্তীতে বিবাদী কোন উত্তরও দেন নি যে তিনি বাদীর কাছে সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি হয়েছেন।
সর্বশেষ প্রিভি কাউন্সিল এ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, হার্ভে এবং ফেসির মধ্যে কোনও চুক্তি সংগঠিত হয়নি কারণ একটি প্রস্তাব গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সেখানে অনুপস্থিত ছিল।
অনুবাদক :
১. রুদ্র জয়া
২. মোহাম্মদ হান্নান
৩. ইমরান হোসেন ইমন
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণাপ্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ