আর. বনাম ম্যাকনটেন (১৮৪৩)

R v M’Naghten (1843)

আর. বনাম ম্যাকনটেন (১৮৪৩)

সাইটেশন : (1843) 8 E.R. 718

জুরিসডিকশন : যুক্তরাজ্য

বাদী : আর. (রেজিনা/রাষ্ট্র)
বিবাদী : ড্যানিয়েল ম্যাকনটেন

ঘটনা :

১৮৪৩ সালের ২০ জানুয়ারি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব এডওয়ার্ড ড্রামন্ড লন্ডনের হোয়াইটহল দিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটের দিকে হাঁটছিলেন। হঠাৎ, ড্যানিয়েল ম্যাকনটন নামক একজন স্কটিশ কাঠমিস্ত্রি পেছন দিক থেকে তার কাছে এগিয়ে আসেন। তিনি ড্রামন্ডের একদম পেছনে এসে তাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করেন। দ্বিতীয় পিস্তল বের করার পূর্বেই পুলিশ তাকে আটক করে। ৫ দিন পরে, ২৫ জানুয়ারি, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড্রামন্ড মৃত্যুবরণ করেন।

ম্যাকনটেনের প্রকৃত লক্ষ্য জনাব ড্রামন্ড ছিলেন না, বরং তার প্রকৃত লক্ষ্য ছিলেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্যার রবার্ট পিল। পরের দিন, যখন ম্যাকনটেনকে আদালতে হাজির করা হয়, তখন তিনি নিজের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেন, “আমার শহরের টোরি (কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা) আমাকে সর্বত্র অনুসরণ করে এবং হয়রানি করে, তারা আমার মানসিক শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আমাকে হয়রানি ও নির্যাতন করতে সব ধরনের চেষ্টা করছে; আসলে, তারা আমাকে হত্যা করতে চায়।” এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, তিনি প্যারানয়েড ডিলিউশনে (বিভ্রম) ভুগছিলেন। বিশেষ করে তার এই বিশ্বাস ছিল যে, কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

ইস্যু :
১. এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বিভ্রমে ভুগছেন, তাকে কি তার কার্যকলাপের জন্য দায়ী করা যেতে পারে?
২. কেউ যদি বিভ্রমে আক্রান্ত হন এবং জানেন যে তার কাজটি অবৈধ, তবুও প্রতিকার পাবেন এই বিশ্বাসে উক্ত কাজটি করেন তাহলে কি তাকে ফৌজদারি দায় থেকে মুক্তি দেওয়া যাবে?
৩. যখন কোনো ব্যক্তি এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বিষয় বা ব্যক্তিকে নিয়ে বিভ্রমে ভুগছেন বলে অভিযোগ করা হয় এবং অপরাধের অভিযোগ আনা হলে পাগলামি (উন্মত্ততা) প্রতিরক্ষা হিসেবে উত্থাপন করা হয়, তখন উক্ত বিষয়ে বিচারকগণের সামনে কী কী প্রশ্ন উপস্থাপন করা উচিত?

যুক্তিতর্ক :

রাষ্ট্রপক্ষ:
রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি দেন যে, যদিও ম্যাকনটেন বিভ্রমে ভুগছেন বলে দাবি করেছিলেন, তবে অপরাধ সংঘটনের সময় তিনি নিজ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে সচেতন ছিলেন। তাঁরা এই ব্যাপারটিতে জোর দেন যে, সচেতনভাবে পিস্তল চালানোর দরুন তিনি সঠিক ও ভুল কাজের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সক্ষম ছিলেন। গ্লাসগো থেকে তার অ্যানাটমি প্রভাষক এবং তার বাড়িওয়ালিকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই জানান যে, ম্যাকনটেন মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন এবং অপরাধ সংঘটনে সক্ষম ছিলেন।

বিবাদীপক্ষ:
বিবাদীপক্ষ যুক্তি দেয় যে, ম্যাকনটেন তার ভ্রান্ত ধারণার কারণে একজন স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তির মতো কাজ করতে অক্ষম ছিলেন। বিবাদীপক্ষ ম্যাকনটেনের নিজ শহর গ্লাসগো থেকে সাক্ষী হাজির করান। তাঁরা সাক্ষ্য দেন যে, ইতঃপূর্বে ম্যাকনটেনকে তারা অদ্ভুত আচরণ করতে দেখেছিলেন এবং নির্যাতিত হওয়ার ও গুপ্তচরবৃত্তির কথাও বলতে শুনেছিলেন। এর পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মতামত দেন যে, ম্যাকনটেনের ভ্রান্ত ধারণাগুলি তার নৈতিক বোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে তিনি তার কাজের প্রকৃতি ও ন্যায়সংগতা বুঝতে অক্ষম ছিলেন। তার মানসিক অবস্থা আইনি উন্মাদনার মানদণ্ডগুলি পূরণ করে।

সিদ্ধান্ত :

বিচারিক আদালত:
আদালত উন্মাদনার কারণে ম্যাকনটেনকে নির্দোষ বলে রায় প্রদান করেন। তিনি “মনোম্যানিয়া”- তে আক্রান্ত ছিলেন, যার ফলে তিনি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে (এক্ষেত্রে নিপীড়নের ভ্রান্ত ধারণা) অতিমাত্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত সাক্ষ্য অবিবাদিত থাকার দরুন রায়টি বিবাদীর পক্ষে দেওয়া হয়। রায় ঘটনার পর ম্যাকনটেনকে একটি মানসিক হাসপাতালে রাখা হয়।

হাউজ অফ লর্ডস:
সংসদ ও রানি ভিক্টোরিয়া উভয়েই আদালতের রায়ের তীব্র সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য যে, রানি ভিক্টোরিয়ার নিজস্ব আততায়ী ১৮৪০ সালে নিজেকে উন্মাদ হিসেবে দাবি করেন। রায়টির পরিপ্রেক্ষিতে হাউজ অফ লর্ডস বিচারপতি লর্ড টিন্ডল সহ কয়েকজন বিচারকগণের একটি প্যানেল ডেকে তাদের বেশ কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। তাদেরকে আইনি উন্মাদনার একটি স্পষ্ট ও কর্তৃত্বপূর্ণ সংজ্ঞা প্রদান ও ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ায় উন্মাদনার প্রতিরক্ষা কীভাবে প্রয়োগ হবে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

সংশ্লিষ্ট নীতি:

ম্যাকনটেন নীতি: যখন একজন বিবাদী উন্মাদনার দরুন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, তখন তাকে নিম্নলিখিত পরীক্ষাটি পরিপূর্ণ করতে হবে:

ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপস্থিতি প্রমাণ করতে হবে-
১. বিবাদী বিবেচনার ত্রুটিতে ভুগছিলেন।
২. এই বিবেচনার ত্রুটিটি একটি মানসিক রোগের কারণে হয়েছিল, যার ফলে,
৩. বিবাদী হয়ত বা তার কাজের প্রকৃতি ও ধরণ বুঝতে পারেননি, অথবা যদি বুঝে থাকেন, তবে জানতেন না যে তাঁর কাজটি অন্যায় ছিল।

আদালত যদি সন্তুষ্ট হন যে, উল্লিখিত শর্তাবলি পূরণ হয়েছে, তাহলে বিবাদীকে উন্মাদনা বা মানসিক অসুস্থতার জন্য অভিযোগ থেকে খালাস দিতে পারেন। বাংলাদেশ সহ অনেক বিচারব্যবস্থায় এই পরীক্ষাটি উন্মাদনার প্রতিরক্ষার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমনটি দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এ প্রতিফলিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৮৪

অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান
২. রাইয়ান তালুকদার

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share