ডোনোহিউ বনাম স্টিভেনসন
রেফারেন্স : [1932] AC 562
জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড
বাদী : ডোনোহিউ
বিবাদী : স্টিভেনসন
ঘটনা :
১৯২৮ সালের ২৬ আগস্ট, তারিখে ডোনোহিউ (বাদী) তার বান্ধবীর সাথে স্কটল্যান্ডের পেইসলি শহরে অবস্থিত ‘ওয়েল-মেদস’ নামক একটি ক্যাফেতে যান। তার বান্ধবী নিজের জন্য ‘প্যারাডাইস’ (স্কটল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি) অর্ডার করেন এবং ডোনোহিউ এর জন্য ‘স্কটসম্যান আইসক্রিম’ (আইসক্রিম ও জিঞ্জার বিয়ারের মিশ্রন) অর্ডার করেন। যথারীতি ক্যাফের মালিক আইসক্রিম ও জিঞ্জার বিয়ার পরিবেশন করেন। জিঞ্জার বিয়ারের বোতলটি অস্বচ্ছ কালো মোড়কে মোড়ানো ছিল এবং বিয়ারের প্রস্তুতকারক ছিল বিবাদী স্টিভেনসন।
ডোনোহিউ আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায়, তার বান্ধবী জিঞ্জার বিয়ার গ্লাসে ঢাললে বোতলের ভেতর থেকে অর্ধগলিত শামুক বেরিয়ে আসে। ডোনোহিউ দাবি করেন উক্ত ঘটনার ফলে তিনি গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস শকে ভুগেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি বিয়ার প্রস্তুতকারকের বিরুদ্ধে পণ্য তৈরিতে অবহেলার অভিযোগ এনে ৫০০ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
কোশ্চেন অব ল :
কোন প্রকার চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও, সাধারণ স্তরের ভোক্তা হিসেবে ডোনোহিউ এর প্রতি প্রস্তুতকারক, স্টিভেনসনের কি কোন প্রকার দায়বদ্ধতা ছিল?
রায় :
ট্রায়াল কোর্ট :
বাদীপক্ষ দাবি করেন, উক্ত বিয়ার পান করার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আর বিবাদীর দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এমনটি হয়েছিলো। তাই, বিবাদী উক্ত ঘটনার জন্য দায়ী। অপরদিকে, বিবাদী পক্ষ দাবি করেন, বিয়ার ক্রয় করার আগে বাদীর উচিত ছিল যথাযথভাবে তা পরীক্ষা করে নেয়া। বিবাদী পক্ষ বলেন, তিনি প্রস্তুতকারী কোম্পানির মালিক মাত্র, তিনি নিজে পণ্য প্রস্তুতকারী নন। ফলশ্রুতিতে, বোতলের ভেতর শামুক থাকার বিষয়টি তার অনুমান করাও সম্ভব ছিল না। বিবাদী পক্ষ আরো দাবি করেন, পণ্যটি সরাসরি তার থেকে বাদীর নিকট পৌঁছায়নি বরং বেশ কয়েকটি মাধ্যম হয়ে সর্বশেষ বাদী নিকট পৌঁছে ছিল। ফলে, বিবাদীকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী করা যাবে না যেহেতু বাদীর প্রতি বিবাদীর কোন প্রকার দায়িত্ব ছিল না।
স্কটল্যান্ডের আদালত রায় প্রদান করে যে, ক্রেতার প্রতি প্রস্তুতকারীর কোনো প্রকার আইনত দায়িত্ব নেই। অনুরূপভাবে, এই মামলাতেও বাদীর প্রতি বিবাদীর কোন আইনত দায়িত্ব ছিল না। ফলে, মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়।
বাদী পক্ষ হাউজ অব লর্ডস এ উক্ত রায়ের বিপক্ষে আপিল করেন।
আপিল কোর্ট :
আপিল আদালতে বিচারকমণ্ডলীর ৩-২ ভোটের ভিত্তিতে বাদী পক্ষ মামলায় জয়ী হন। মামলার মূল রায়ের মধ্যে লর্ড অ্যাটকিন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন :
- দায়িত্বে অবহেলা একটা পৃথক মামলার বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।
- প্রস্তুতকারককে সর্বশেষ স্তরের ভোক্তার প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
- ❝প্রতিবেশী নীতি❞ নামক বিষয়টির সাথে পরিচয় করানো হয়। কোন কাজ কারার সময় কার কার প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে হবে তা নির্ধারণ করা হয় “প্রতিবেশী নীতি” এর মাধ্যমে।
- ‘ভুক্তভোগী কর্তৃক কোন অভিযোগ উত্থাপনের ক্ষেত্রে ‘দুইপক্ষের মধ্যবর্তী চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক ছিল কি না’ এই বিষয়টি কোন বাঁধা হতে পারবে না।
- অবহেলার বিষয় “থ্রি পার্ট টেস্ট” এর মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে।
লর্ড অ্যাটকিন ‘প্রতিবেশী নির্ধারণ’ এর বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ❝কোন কাজ করার সময় আমার কাজের ফলে যে বা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে আমার মনে হবে [চিন্তায় আসবে] তারাই ঐ কাজ সংগঠিত হওয়ার মুহূর্তে আমার প্রতিবেশী বলে বিবেচিত হবে❞ তিনি আরো বলেন, ❝কাজ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ঐ কাজের ফলে তার ‘প্রতিবেশী’-র কোন প্রকার ক্ষতি না হয়।❞
আদালত বলেন, বাদী তার অবস্থান থেকে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন৷ অপরদিকে, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার ফলে বাদীর বিবাদীর দায়িত্ব ছিল যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা, যা তিনি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে, মিসেস ডোনোহিউ এর পক্ষে রায় প্রদান করা হয় এবং তিনি ২০০ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ লাভ করেন।
অনুবাদক :
১. ফাহিম আহমেদ
২. মো. আতিকুর রহমান
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণাপ্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ