আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র (২০১৭)

Ataur Midha v State Case Feature Photo BN

আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর বনাম রাষ্ট্র

রেফারেন্স : 15 SCOB [2021] AD 1

জুরিসডিকশন : বাংলাদেশ

বাদী : আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর
বিবাদী : রাষ্ট্র

ঘটনা :

২০০১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, চারাবাগ মাদ্রাসা সংলগ্ন জনাব ওলিউল্লাহ এর দোকানের সামনে ভুক্তভোগী জামাল, আফতাব, আব্দুল বাকের এবং ইয়ামিন গল্প করছিলো। আতাউর এবং তার দুইজন সহযোগী, ভুক্তভোগী জামালের উপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। উক্ত ঘটনাটির ১৫ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিল। যেহেতু ঘটনাটি পরিষ্কার এবং অন্য কোন জটিলতা ছিল না, তাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে মামলাটি সমাধান করা সহজ ছিল। ট্রাইব্যুনাল দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে আপিলকারীদের এবং সাথে অন্য একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিপক্ষে বাদীপক্ষ হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি আপিল এবং জেল আপিল দায়ের করে। ৩০শে অক্টোবর ২০০৭ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগ পূর্বের রায় বহাল রেখে আপিল নিষ্পত্তি করে। পরবর্তীতে, বাদীপক্ষ লিভ টু আপিলের জন্য একটি ফৌজদারি পিটিশন দায়ের করে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে, আপিল বিভাগ ফৌজদারি আপিল নং ১৫/২০১০ এর রায়ের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে “আমৃত্যু কারাদণ্ড” অর্থাৎ “স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া অবধি জীবনের বাকি সময়ের কারাবাস” প্রদান করেন এবং “আমৃত্যু কারাদণ্ড বলতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কে বুঝাবে” বলে উল্লেখ করেন।

মামলার বাদীপক্ষ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখের আপিল বিভাগ কর্তৃক ফৌজদারি আপিলে গৃহীত রায়ের পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করে।

ইস্যু :
দণ্ডবিধি, ১৮৬০; ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ ; কারা বিধি, ১৮৯৪ এবং জেল কোডের আলোকে “আমৃত্যু কারাদণ্ড” মানে “স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া অবধি জীবনের বাকি সময় কারাবাস” নাকি এরচেয়ে কম সময়ের কারাবাস।

সিদ্ধান্ত :

নিম্নোক্ত ব্যাখ্যা ও নির্দেশনার উল্লেখপূর্বক পুনঃবিবেচনার আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয় :

  1. দৃশ্যত “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” শব্দটির মাধ্যমে বুঝায় ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া অবধি জীবনের বাকি সময়ের কারাবাস’। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৫৩ তে ‘যাবজ্জীবন কারাবাস’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে।
  2. যদি দণ্ডবিধির ধারা ৪৫, ৫৩, ৫৫ ও ৫৭ এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ৩৫ক কে একসাথে মিলিয়ে শব্দটির ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” বলতে ৩০ বছরের কারাদণ্ড কে বুঝায়।
  3. উপর্যুপরি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭২ এর অধীনে যদি কোন অপরাধীকে আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক “আমৃত্যু কারাদণ্ড” শব্দটি উল্লেখপূর্বক রায় দেয়া হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি ফৌজদারি কার্যবিধি এর ৩৫ক ধারার সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। যুগান্তকারী এই রায় “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” এর ধারণাকে পাল্টে দিয়ে নতুন একটি আইনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অতএব, যদি আদালত রায় প্রদানের সময় “আমৃত্যু কারাদণ্ড বা স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া অবধি জীবনের বাকি সময়” উল্লেখ করেন তাহলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ৩৫ক বা কারা বিধিতে উল্লিখিত সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারবে না।
  4. রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাদী পক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন যে, “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” এর অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ড। একই সাথে, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, কারা বিধি ইত্যাদি আইনের অধীনে শাস্তি হ্রাস হওয়া বা পরিবর্তন হওয়ার মতো সুযোগ ভোগ করতে পারবে বলেনও যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন।
  5. বিধিতে উল্লিখিত আইনের ব্যাখ্যার অপ্রতুলতার বিষয়টি বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী উল্লেখ করেন। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ❝সাজা প্রদানের ব্যাখ্যার বিষয়ে একটি স্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন❞

সর্বশেষ, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার মাধ্যমে পুনঃবিবেচনার আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়। উক্ত রায়ে, “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড” বলতে ৩০ বছরের কারাদণ্ডকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, দণ্ডবিধির ধারা ৪৫ এবং ৫৩ কে ধারা ৫৫ এবং ৫৭ এর সাথে এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৫ক এর সাথে একত্রে বিবেচনা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৪৫, ৫৩, ৫৫ ও ৫৭
  2. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
    • ধারা : ৩৫ক

অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share