গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কো. লি. বনাম এ.বি.এম. শায়েস্তা খান (১৯৭৬)

Gladstone v Shayesta Khan Case FP BN

গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কো. লি. বনাম এ.বি.এম. শায়েস্তা খান

রেফারেন্স : 28 DLR (1976) 344

জুরিসডিকশন : পাকিস্তান (বাংলাদেশ)

আপিলকারী : গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড
বিবাদী : এ.বি.এম. শায়েস্তা খান এবং অন্যান্য

ঘটনা :

১৯৫৫ সালের অর্থ মামলা নাম্বার ৩৫ এবং ১৯৫৮ সালের ৩১ নাম্বার মামলার অধীনে, বাদী, এ.বি.এম. শায়েস্তা খান, যথাক্রমে গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এবং গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে নির্মিত দুটি বাংলোর বকেয়া ভাড়া এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। দুটি কোম্পানি একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকায়, অভিযুক্ত পক্ষ নির্ধারণে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়।

বিবাদের সূত্রপাত হয় যখন, গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, জনাব খানকে ৭২,০০০ টাকা অগ্রিম প্রদান করে, কোম্পানির ব্যবহারের জন্য দুটি বাংলো নির্মাণ করতে বলে এবং নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর, ৭ মার্চ ১৯৫২ তারিখে গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি বাংলোগুলো নিজেদের দখলে নেয় এবং ভাড়ার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তিতে উল্লেখ ছিল প্রতি মাসে ৯৫০ টাকা ভাড়া প্রদান হবে, যার মধ্যে ৬০০ টাকা অগ্রিমের প্রদান করা অর্থের সাথে সমন্বয় করা হবে এবং বাকি ৩৫০ টাকা নগদে প্রদান করা হবে। তবে বাংলো নিজেদের দখলে নেয়ার পরই গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি বাংলোর রাস্তা এবং কর্মচারীদের বাসস্থানের অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং নির্মাণকাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি দাবি করে ভাড়া প্রদান স্থগিত করে। খান ৮ মার্চ ১৯৫২ তারিখে এক চিঠিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং প্রস্তাব করেন যে, প্রয়োজনীয় মেরামত কোম্পানি নিজেই করতে পারে এবং উক্ত মেরামতের ব্যয় ভাড়ার সাথে সমন্বয় করা যেতে পারে।

অপরদিকে, গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ১৯৫৬ সালে অর্থ মামলা নাম্বার ৯ দায়ের করে এবং চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। একই সাথে নগদ ও নির্মাণ সামগ্রীর অগ্রিম অর্থ ফেরত চায়।

ইস্যু :
১. অনাদায়িক ভাড়া এবং ক্ষতিপূরণের জন্য কোন কোম্পানি দায়বদ্ধ হবে, গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নাকি গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড।
২. গ্ল্যাডস্টোন ওয়াইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক দায়েরকৃত ১৯৫৬ সালের অর্থ মামলা নাম্বার ৯, তামাদি আইন অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য ছিল কি না এবং গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, অগ্রিম প্রদান করা অর্থ ফেরত পাওয়া ও চুক্তিভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে কি না।
৩. বাদীর মেরামতের খরচ ভাড়ার সাথে সমন্বয় করার প্রস্তাবটি, যেটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে গ্রহণ করা হয়নি, সময়ের অতিক্রান্তির কারণে বাতিল বলে গণ্য হবে কি না।

যুক্তিতর্ক :

বাদীপক্ষ যুক্তি উত্থাপন করেন যে, বিবাদীগণ অনাদায়ি ১২,৬০০ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ জন্য ১১,৭৫৯ টাকা ৮ পয়সা ৬ পাই প্রদান করতে বাধ্য। দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের মধ্যে ছিল বাথটাব, পাইপ, বৈদ্যুতিক ফিটিংসসহ বিভিন্ন সামগ্রী হারিয়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়াদি, যা বাংলোগুলো বিবাদীরা দখলে থাকার সময় ঘটেছিল। বাদী দাবি করেন যে, উক্ত ক্ষতি ও অন্যান্য ত্রুটির জন্য তিনি (বিবাদী) এবং তার ছেলে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, যদিও বাংলো হস্তান্তরের সময় কোনো ইনভেন্টরি বা তালিকা করা হয়নি। এছাড়াও, বাদী দাবি করেন যে, গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এবং গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড পরস্পর বিনিময়কারী হিসেবে কাজ করতো, ফলে উভয় কোম্পানি ভাড়া এবং ক্ষতিপূরণের জন্য দায়বদ্ধ।

অপরদিকে, বিবাদীরা এই দাবিগুলো অস্বীকার করেন। তারা বলেন, বাংলো ফেরত দেওয়ার আগে তারা সব ধরনের মেরামত সম্পন্ন করেছেন এবং কোনো ইনভেন্টরি বা তালিকা না থাকার কারণে বাদীর অভিযোগ দুর্বল হয়েছে। তারা আরো দাবি করেন যে, বাথরুম ফিটিংসের মতো অতিরিক্ত ফিটিংস তাদের নিজেদের খরচে লাগানো হয়েছিল এবং তা ভাড়ার সাথে সমন্বয় করা হয়েছিল, যা আগে বাদী প্রস্তাব করেছিলেন। তারা এটাও যুক্তি দেন যে গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (পাকিস্তানে নিবন্ধিত) এবং গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (ভারতে নিবন্ধিত) দুটি সম্পূর্ণ পৃথক কোম্পানি। গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ছিল প্রকৃত ভাড়াটে এবং ভাড়ার দায়িত্ব ছিল তাদের উপর। তারা আরো বলেন, ১৯৫৬ এর অর্থ মামলা নাম্বার ৯, তামাদি আইনের অধীনে বাতিল হওয়া উচিত, কারণ চুক্তিভঙ্গ ১৯৫২ সাল বা সর্বশেষ ডিসেম্বর ১৯৫৫-এর মধ্যে ঘটেছিল, যা মামলা দায়েরের সময়সীমাকে অতিক্রম করেছে।

পরিশেষে, বিবাদীরা দাবি করেন যে বাদীর অনাদায়ি ভাড়ার অভিযোগের বিপরীতে তারা আগেই ৭২,৭০০ টাকা নগদ এবং ৬,৯৬০ টাকা সমমূল্যের সামগ্রী প্রদান করেছিলেন, যা সমন্বয় করা উচিত।

সিদ্ধান্ত :

আদালত রায় দেন যে গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ভাড়া বকেয়ার জন্য দায়বদ্ধ, কারণ সংশ্লিষ্ট সমস্ত চুক্তি ও নথিতে উক্ত কোম্পানিকে স্পষ্টভাবে ভাড়াটে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্ল্যাডস্টোন উইলি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, যদিও কিছু ক্ষেত্রে গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে কাজ করেছিল, কিন্তু ভাড়ার জন্য তারা দায়ী নয়। বিচারক উল্লেখ করেন যে, এই দুই কোম্পানি তাদের জটিল লেনদেন থাকা সত্ত্বেও আইনগতভাবে পৃথক তারা সত্তা। তাই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, গ্ল্যাডস্টোন লায়াল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড অনাদায়ি ভাড়া জন্য এককভাবে দায়বদ্ধ।

এছাড়াও, বাদীর পণ্যসামগ্রী ক্ষতির দাবিটি আদালত খারিজ করে দেন। বাংলো হস্তান্তরের সময় কোনো ইনভেন্টরি না থাকায় এই দাবিটি দুর্বল বলে গণ্য করা হয় এবং উক্ত দাবির পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমানাদিও আদালতে নিকট প্রদান করা হয়নি। ১৯৫৬ সালের অর্থ মামলা নাম্বার ৯, প্রসঙ্গে আদালত তামাদি আইনের বিষয়টি আমলে নেন। কারণ, চুক্তিভঙ্গ ঘটেছিল মামলার অনেক আগে, ফলে মামলা দায়ের করার নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল।

উক্ত মামলাটি চুক্তি আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি তুলে ধরে। বিশেষত, যদি কোনো প্রস্তাবের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা না থাকে, তবে যুক্তিসংগত সময় অতিক্রান্ত হলে প্রস্তাব বাতিল বলে গণ্য হয়। বাদীর পক্ষ থেকে মেরামতের খরচ ভাড়ার সাথে সমন্বয়ের প্রস্তাবটি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণ করা হয়নি। তাই আদালত এই প্রস্তাবকে বাতিল বলে গণ্য করেন এবং উল্লেখ করেন যে, কোনো প্রস্তাবে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না থাকলেও, একটি যৌক্তিক সময় অতিক্রান্তের ফলে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা যাবে।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. চুক্তি আইন, ১৮৭২
    • ধারা : ৬(২)
  2. তামাদি আইন, ১৯০৮
    • ধারা :

অনুবাদক :
১. রোজিনা আকতার নিশু

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share