ডলি রানী বনাম মনীশ কুমার চঞ্চল
রেফারেন্স : [2024] SCC Online SC 754
জুরিসডিকশন : ভারত
বাদী : ডলি রানী
বিবাদী : মনীশ কুমার চঞ্চল
ঘটনা :
বাদী, ডলি রানী (স্ত্রী), এবং বিবাদী, মনীশ কুমার চঞ্চল (স্বামী), দুজনেই প্রশিক্ষিত বৈমানিক ছিলেন, যারা ৭ই মার্চ, ২০২১ -এ তাদের বাগদান সম্পন্ন করেছিলেন এবং বাদীর দাবি অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ই জুলাই, ২০২১ -এ তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। তারা ভাদিক জনকল্যাণ সমিতি (নিবন্ধিত) থেকে বিবাহের একটি সনদপত্র এবং উত্তর প্রদেশ বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৭ এর অধীনে বিবাহ নিবন্ধনের একটি সনদপত্র পেয়েছিল। এই দম্পতি হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান মেনে ২৫শে অক্টোবর, ২০২২ -এ একটি আনুষ্ঠানিক বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন।
তবে তাদের মধ্যে কিছু বিরোধ ও মতানৈক্য দেখা দেয় এবং ফলশ্রুতিতে, বাদী ডলি রানী, বিবাদীর পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবি ও হয়রানির অভিযোগ তোলেন। একইসাথে তিনি ১৭ই নভেম্বর, ২০২২ তারিখে ভারতীয় দণ্ডবিধির (IPC) ধারা ৪৯৮ক, ৪২০, ৫০৬, ৫০৯ এবং ৩৪-এর অধীনে এবং যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৬১ এর ৩ এবং ৪ ধারার অধীনে একটি মামলা দায়ের করেন ।
১৩ই মার্চ, ২০২৩- এ, মনীশ কুমার চঞ্চল বিহারের একটি পারিবারিক আদালতে হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ এর ধারা ১৩ (1)(ia) -এর অধীনে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। ডলি রানীর বদলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত মামলাটি ঝাড়খণ্ডে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরের আবেদনটি অপেক্ষমাণ থাকাকালীন, বাদী এবং বিবাদী উভয়ই ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি যৌথ আবেদন দাখিল করেন। তারা উক্ত আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নিকট অনুরোধ জানান যে, ৭ই জুলাই, ২০২১ -এ সম্পন্ন হওয়া বিবাহ, যেহেতু হিন্দু রীতি অনুযায়ী সম্পন্ন হয়নি, সেহেতু এই বিবাহ যেন বাতিল ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন।
ইস্যু :
১. বাদী ও বিবাদীর এর বিবাহ কি বৈধ বিবাহ বলে বিবেচিত হয়েছিল? তারা কি স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা অর্জন করেছিলো?
২. একে অপরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা কি প্রত্যাহার করা উচিত ছিল?
৩. ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে বাদী ও বিবাদীর দায়ের করা যৌথ আবেদনটি কি আদালত কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত ছিল?
সিদ্ধান্ত :
সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট, বিবাদীর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনসহ বাদীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য ফৌজদারি মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করেন। আদালত উল্লেখ করেন, ডলি রানী এবং মনীশ কুমার চঞ্চল, হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ -এর ধারা ৭ এ বর্ণিত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ করে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন নি। সুতরাং, হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-এর ধারা ৭ এ উল্লিখিত প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ না হওয়ায় তাদের বিবাহকে আইনি বৈধ বিবাহ বলে গণ্য করা যাবে না এবং উক্ত বিবাহ বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, হিন্দু আইনানুসারে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন ব্যতিরেকে শুধু সম্মতিপত্র গ্রহণ বিবাহের কোন বৈধতা প্রদান করে না।
ফলস্বরূপ, ভাদিক জনকল্যাণ সমিতি এবং উত্তরপ্রদেশ বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৭ এর অধীনে ডলি রানী এবং মনীশ কুমার চঞ্চলকে প্রদত্ত বিবাহ নিবন্ধন পত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, বাদী এবং বিবাদী কখনো স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা অর্জনই করেননি, অর্থাৎ তাদের বিবাহ হিন্দু আইনের অধীনে বৈধ নয়। তদনুযায়ী আদালত উক্ত বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন, ভরণপোষণ, এবং একে অপরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলা খারিজ করেন দেন।
অতএব, আদালত এ সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, ডলি রানী এবং মনীশ কুমার চঞ্চলের মধ্যে হিন্দু আইনের অধীনে কোনো বৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল না এবং ভারতের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের যৌথ আবেদন মঞ্জুর করেন।
সংশ্লিষ্ট আইন :
- ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০
- ধারা : ৩৪, ৪৯৮ক, ৪২০, ৫০৬, ৫০৯
- যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৬১
- ধারা : ৩, ৪
- হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫
- ধারা : ৭
- ভারতীয় সংবিধান
- অনুচ্ছেদ : ১৪২
অনুবাদক :
১. মোহাম্মদ হান্নান
২. ইমরান হোসেন ইমন
নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ