হামিদুল হক চৌধুরী বনাম খাজা নুরুদ্দীন (১৯৬৩)

Hamidul v Khwaja Nuruddin Case Feature Photo BN

হামিদুল হক চৌধুরী বনাম খাজা নুরুদ্দীন এবং অন্যান্য

রেফারেন্স : [1963] 15 DLR

জুরিসডিকশন : পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)

বাদী : হামিদুল হক চৌধুরী (মন্ত্রী, অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়)

বিবাদী :

  1. খাজা নুরুদ্দীন (স্বত্বাধিকার, দ্য মর্নিং নিউজ)
  2. প্রকাশক, দ্য মর্নিং নিউজ
  3. স্বত্বাধিকার, জুবিলি প্রেস

নোট : তৎকালীন সময়ে ❝দ্য মর্নিং নিউজ❞ পত্রিকা ❝জুবিলি প্রেস❞ হতে মুদ্রণ ও বিপণন করা হতো।

উক্ত “মানহানির মামলা” টি বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) একটি বহুল আলোচিত মামলা। মানহানি সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে।
১. লাইবেল (লিখিত মানহানি)
২. স্ল্যান্ডার (মৌখিক মানহানি)
লিখিতভাবে কোন মিথ্যা বা মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করা যা আইন দ্বারা সমর্থনযোগ্য নয় এরূপ কার্যকলাপকে “লাইবেল” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি কোন মানহানিকর বক্তব্য ছবি, কার্টুন, পোস্টার বা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাহলে উক্ত বিষয়টি “লাইবেল” এর অন্তর্ভুক্ত হবে। অপরদিকে, “স্ল্যান্ডার” বলে এরূপ মানহানিকে বুঝায় যা মৌখিকভাবে কোন উক্তি বা ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।

ঘটনা :

অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন শিরোনামে ❝দ্য মর্নিং নিউজ❞ পত্রিকা যথাক্রমে ১৭.০৪.১৯৪৯, ২৪.০৪.১৯৪৯, ১৫.০৫.১৯৪৯, ২২.০৫.১৯৪৯ এবং ২৯.০৫.১৯৪৯ তারিখে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
❝দ্য মর্নিং নিউজ❞ আরো জানায়, মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী ৬০ হাজারেরও বেশি লোহার ব্যারেল এবং প্লেট পাচারের মাধ্যমে দেশের ২ কোটি টাকা ক্ষতি করেছেন। উক্ত সংবাদের মাধ্যমে ❝দ্য মর্নিং নিউজ❞ বাদী (হামিদুল হক চৌধুরী) এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ করে। বাদী জানান, উপস্থাপিত সংবাদটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাদী আরো উল্লেখ করেন, এরূপ মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদের ফলে তার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাদী, ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মানহানির মামলা দায়ের করেন।

ইস্যু :
বিবাদী পক্ষ কি মানহানির (লাইবেল) জন্য দায়ী ছিল?

সিদ্ধান্ত :

সাব-জজ কোর্ট :
সাব-জজ কোর্ট বাদীর পক্ষে রায় ঘোষণা করেন এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪০,০০০ টাকা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন।

হাইকোর্ট :
সাব-জজ কোর্টের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে বিবাদী পক্ষ হাইকোর্টে আপিল করেন। বিচারক জনাব আলী এবং বিচারক জনাব হাসান সাব-জজ কোর্ট কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৪০,০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করে রায় ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষণ :
এরূপ মামলার ক্ষেত্রে বাদীপক্ষকে প্রমাণ করতে হয় যে, উক্ত ঘটনাটি ‘লাইবেল’ শ্রেণিভুক্ত একটি মানহানিকর ঘটনা। একইসাথে, এর ফলে সুশীল সমাজের নিকট তার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। উক্ত মামলায়, বাদী ছিলেন একজন সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ফলে তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত কোন মানহানিকর সংবাদ তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপরও প্রভাব ফলতে পারে। উপর্যুক্ত সকল বিষয়ে বিবেচনাপূর্বক, বিচারকগণ বিবাদীকে মানহানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন।

সংশ্লিষ্ট আইন :

  1. দণ্ডবিধি, ১৮৬০
    • ধারা : ৫০০, ৫০১, ৫০২

অনুবাদক :
১. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণা প্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ

Share