বোলাম বনাম ফ্রাইর্ন হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ (১৯৫৭)

Bolam v Friern Case Feature Photo BN

বোলাম বনাম ফ্রাইর্ন হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ

রেফারেন্স : [1957] 1 WLR 583

জুরিসডিকশন : ইংল্যান্ড

বাদী : জন হেক্টর বোলাম
বিবাদী : ফ্রাইর্ন হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ

ঘটনা :

বাদী, জনাব বোলাম, বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। ফলে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য তিনি ফ্রাইর্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ডাক্তার আলফ্রের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডাক্তার আলফ্রে তাকে ইলেক্ট্রো-কনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নামক থেরাপি গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন। উক্ত থেরাপিতে হালকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যার ফলে রোগীর পেশীতে সংকোচন এবং খিঁচুনি অনুভূত হয়। বাদী যথাক্রমে ১৯ আগস্ট এবং ২৩ আগস্ট, ১৯৫৪ তারিখে থেরাপি গ্রহণ করেছিলেন। পূর্বের দুইবারের মতো এবারও থেরাপির সময় ডাক্তার আলফ্রে কোনোপ্রকার পেশি শিথিলকারক ওষুধ ব্যবহার না করেই এবং রোগীকে কোনোভাবে আবদ্ধ/ নিয়ন্ত্রণ না করেই থেরাপি প্রদান করেন। থেরাপি প্রদানের পূর্বে পেশি শিথিলকারী ওষুধ ব্যবহার না করার (অনিয়ন্ত্রিত) পদ্ধতিটি প্রধান চিকিৎসক ড. বাস্টারেচিয়াও চর্চা করতেন। ২৩ আগস্ট তারিখে ইসিটি থেরাপি চলাকালীন সময়ে পেশি সংকোচনের ফলে রোগীর অ্যাসিটাবুলার (কোমরের নিচের হাড়) এ ফ্র্যাকচার (ফাটল/ভাঙন) দেখা দেয়।
উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাদী (বোলাম) চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বাদী তিনটা বিষয় উল্লেখ করেন-

  1. হাড়ে ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি সম্পর্কে বাদীকে পূর্ব হতে অবহিত করা হয় নি।
  2. থেরাপির পূর্বে কোনোপ্রকার পেশি শিথিলকারক ওষুধ ব্যবহার করা হয় নি।
  3. পেশি শিথিলকারক ওষুধদের বিকল্প হিসেবে রোগীর কম্পন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয় নি।

উক্ত মামলাটির বিচারার্থে কুইন্স বেঞ্চ বিভাগে বিচারক ম্যাকনয়ার এর তত্ত্বাবধানে একটি বিচারকমণ্ডলী পরিষদ গঠন করা হয়। বাদীর পক্ষে, মনোবিজ্ঞানী ডাক্তার র‍্যান্ডাল এবং বিবাদীর পক্ষে ডাক্তার বাস্টারেচিয়া সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেন। চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত বেশ কিছু বিশেষজ্ঞও উপস্থিত ছিলেন তাদের মতামত প্রদানের জন্য।

ইস্যু :

  1. বিবাদী যে চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন তা কি সমসাময়িক চিকিৎসা প্রথার যুক্তিসংগত মানের নিচে ছিল?
  2. বিবাদী কি চিকিৎসা শুরু করার আগে বাদীকে হাড় ফ্র্যাকচারের সম্ভাব্য ঝুঁকি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়ে সমসাময়িক চিকিৎসা প্রথার যুক্তিসংগত মানের নিচে ছিলেন?

সিদ্ধান্ত :

বাদীর পক্ষে ডাক্তার র‍্যান্ডাল বলেন, ইসিটি থেরাপির পূর্বে পেশি শিথিলকারক ওষুধ ব্যবহার করা প্রয়োজন। যদিও চিকিৎসকদের একটি অংশ উক্ত থেরাপির পূর্বে কোনোপ্রকার পেশি শিথিলকারক ওষুধ ব্যবহার করেন না। একইভাবে, ওষুধের বিকল্প হিসেবে অন্য কোন পদ্ধতি গ্রহণকেও তিনি সমর্থন করেন। তবে, একইসাথে ওষুধ ও বিকল্প পদ্ধতির কোনটিই গ্রহণ না করাকে তিনি ❝বোকামি❞ হিসেবে উল্লেখ করেন। পূর্ব সতর্কীকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, তার মতে চিকিৎসার পূর্বে রোগীকে সম্ভাব্য সকল প্রকার ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করা উচিত।

বিবাদীর পক্ষে ড. বাস্টারেচিয়া বলেন, উক্ত থেরাপির ফলে হাড়ে ফাটলের অনুপাত প্রায় ১০ হাজার জনে ১ জনের। তাই, এ বিষয়ে রোগীকে স্বেচ্ছায় অবহিত করে আতঙ্কগ্রস্ত করা বাঞ্ছনীয় নয় যদি না রোগী নিজ থেকে ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি আরো জানান, পেশি শিথিল কারক ওষুধ ব্যবহার না করার ফলে হাড় ফাটলের যে ঝুঁকি রয়েছে তার চেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে চেতনানাশকের মতো পেশি শিথিলকারক কোন ওষুধ ব্যবহারে, এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই, বিবাদীর গৃহীত পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ ছিল। ওষুধের বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৫১ সালের পর হতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ উক্ত পরিস্থিতিতে হাড় ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের মতামত আমলে নিয়ে বিচারকমণ্ডলী বিবাদীর পক্ষে রায় ঘোষণা করে জানান, এটি পরিষ্কার যে বিবাদী কর্তৃক গৃহীত একই চিকিৎসা পদ্ধতি সমসাময়িক আরো চিকিৎসকগণ চর্চা করেন। যেহেতু, উক্ত রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি মধ্যে বিবাদীর গৃহীত পদ্ধতিটিও একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি সেহেতু অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্য হতে যেকোনো একটা পদ্ধতি গ্রহণের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।

বোলাম টেস্ট :
কোন একটি বিশেষ পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনিত ‘অবহেলা’ বিষয়ক মামলায় তাদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয় নির্ধারণের জন্য যে পরীক্ষা করা হয় তাকে ❝বোলাম টেস্ট❞ বলা হয়। উক্ত টেস্ট অনুযায়ী :

  1. কোন বিশেষায়িত পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের দক্ষতা ঐ পেশায় নিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদের দক্ষতার সাথে তুলনার মাধ্যমে পরিমাপ করা হবে।
  2. উক্ত পেশায় কোন একটি কাজের ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি থাকতে পারে৷ যদি ঐসকল পদ্ধতির যে কোন একটি কেউ অনুসরণ করে তাহলে তাকে ‘অবহেলা’ এর জন্য দায়ী করা যাবে না।
  3. আত্মরক্ষার জন্য ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা পদ্ধতি, বৈধ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবে না।

অনুবাদক :
১. ফাহিম আহমেদ
২. মো. আতিকুর রহমান

নোট : The Case Summary আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আইনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ঘটনা ও রায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্মটি কখনোই পূর্ণাঙ্গ আইনের ধারণাপ্রদান করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু মাত্র মামলার সারাংশ নির্ভর হওয়াকে নিরুৎসাহিত করি। ধন্যবাদ


Cite this Page:

OSCOLA

APA

Bluebook

Share